মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

হাফেজ আল আসাদের মুখে আসাদ পরিবারের পালানোর রাতের অজানা গল্প

হাফেজ আল আসাদের মুখে আসাদ পরিবারের পালানোর রাতের অজানা গল্প
হাফেজ আল আসাদের মুখে আসাদ পরিবারের পালানোর রাতের অজানা গল্প। ছবি : মিডল ইস্ট আই

সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বড় ছেলে হাফেজ আল-আসাদের নামে এক্স এবং টেলিগ্রাম প্ল্যাটফর্মে দুটি অ্যাকাউন্ট চালু হওয়ার পর থেকে সিরিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে আসাদ পরিবারের পালানোর বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে, যেদিন বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করে।

হাফেজ আল-আসাদ টেলিগ্রামে ৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে তাকে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর একটি রাস্তায় দেখা যায়। ভিডিওতে তিনি নিশ্চিত করেন, ওই দুটি অ্যাকাউন্ট তার নিজের এবং অন্য কোনো অ্যাকাউন্ট তিনি পরিচালনা করেন না। তবে পরে এক্স প্ল্যাটফর্মের অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে যায়।

পালানোর রাতের বিবরণ

হাফেজ আল-আসাদ টেলিগ্রাম ও এক্স অ্যাকাউন্টে ‘আসাদের শাসনামলের শেষ রাত’ সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, দামেস্ক ত্যাগের কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না, এমনকি বিকল্প প্রস্তুতিও ছিল না। এক রুশ কর্মকর্তার ফোন পেয়ে তারা জানতে পারেন, পরিস্থিতির অবনতির কারণে তাদের দ্রুত দামেস্ক থেকে লাতাকিয়ায় চলে যেতে হবে।

হাফেজ লেখেন, ‘দূর থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু সেটা আমাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়নি, কারণ যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আমরা এসবের সঙ্গে অভ্যস্ত ছিলাম। দামেস্ক রক্ষায় সেনাবাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে, এমন কোনো ইঙ্গিত তখনও ছিল না। তবে হিমস থেকে হঠাৎ সেনা প্রত্যাহারের খবর পাওয়ার পরই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপরও আমাদের পালানোর কোনো প্রস্তুতি ছিল না, যতক্ষণ না ৮ ডিসেম্বর রোববার ভোরে আমাদের বাড়িতে মালিকি এলাকায় রুশ পক্ষের এক কর্মকর্তা এসে উপস্থিত হন। তিনি জানান, দামেস্কের পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক এবং লাতাকিয়া থেকে সামরিক অভিযানগুলো তদারকি করা নিরাপদ হবে, কারণ উপকূলীয় অঞ্চল এবং সাহেল আল-ঘাবের ফ্রন্টে তীব্র সংঘর্ষ চলছে।’

দামেস্ক ত্যাগ এবং লাতাকিয়া পৌঁছানো

হাফেজ জানান, কিছুক্ষণ পর তারা দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং গভীর রাতে সেখানে পৌঁছান। বিমানবন্দর সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিল, এমনকি কন্ট্রোল টাওয়ারেও কেউ ছিল না। সেখানে তার চাচা মাহের আল-আসাদের সঙ্গে দেখা হয়। পরে তারা একটি রুশ সামরিক বিমানে লাতাকিয়া চলে যান এবং ভোর হওয়ার আগেই হমেইমিম বিমানঘাঁটিতে পৌঁছান।

হাফেজ আরও জানান, হমেইমিম ঘাঁটিতে থাকাকালে একাধিক ড্রোন হামলা এবং আশপাশে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ঘাঁটির কমান্ড থেকে তাদের জানানো হয়, পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে ঘাঁটি ছাড়া সম্ভব নয়, কারণ চারপাশে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের উপস্থিতি ছিল এবং ঘাঁটি রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যাহারের ফলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। পরে মস্কোর সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের মস্কো নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং তারা একটি রুশ সামরিক বিমানে মস্কো পৌঁছান।

মস্কোতে অবস্থান ও বিতর্ক

ভিডিওটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা হাফেজের অবস্থান মস্কোর বলশায়া অর্ডিনকা রাস্তায় শনাক্ত করেন। ব্রিটিশ পত্রিকা “দ্য টাইমস” জানিয়েছে, আসাদ পরিবার মস্কো সিটির একটি অভিজাত আবাসিক কমপ্লেক্সে বসবাস করছে, যেখানে তাদের ২০টিরও বেশি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে।

হাফেজ আল-আসাদের এই ভিডিও সিরিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকের ধারণা, আসাদ পরিবার সিরিয়ার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এবং নিজেদের শাসনামলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিষয়ে সচেতন রয়েছে।

কিছু বিশ্লেষকের মতে, হাফেজের বক্তব্য অস্বাভাবিক, কারণ তিনি বিদ্রোহীদের “সন্ত্রাসী” বলে আখ্যায়িত করেননি। অন্যদিকে, অনেকেই মনে করছেন, সিরিয়ার জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে রাশিয়ার উচিত আসাদ পরিবারের সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা এবং তাদের দ্বারা লুণ্ঠিত সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়া।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা