রাশিয়া ও ইরান নিজেদের কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করতে একটি নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। শুক্রবার মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান একটি সামগ্রিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রাশিয়ার জন্য এ অঞ্চলে নিজের প্রভাব বজায় রাখার পথ আরও মসৃণ করবে।
নতুন এই চুক্তি দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে অনেকে আশা করছেন। চুক্তির মাধ্যমে প্রতিরক্ষা, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, জ্বালানি, আর্থিক খাত, পরিবহন, শিল্প, কৃষি, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার পথ উন্মুক্ত হয়েছে।
২০০১ সালে স্বাক্ষরিত রাশিয়া-ইরান সম্পর্কের পূর্ববর্তী চুক্তির স্থলাভিষিক্ত এই নতুন দলিলটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে। দীর্ঘ আলোচনার পর, দুই পক্ষ গত বছরের জুনে চুক্তির খসড়ায় সম্মত হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে নিজেকে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী ভিত্তি পেয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়া তার ভূরাজনৈতিক প্রভাব ধরে রাখার জন্য একটি কার্যকর অংশীদার খুঁজে পেয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, চুক্তিটি কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়। বরং এটি রাশিয়া ও ইরানের সক্ষমতা বাড়ানোর একটি গঠনমূলক উদ্যোগ। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সমস্যার সমাধান এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার হবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এই চুক্তিকে ভবিষ্যতের জন্য একটি রোডম্যাপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, চুক্তিটি শুধু রাজনৈতিক দলিল নয়, বরং অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং ইরান-রাশিয়ার সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর কাঠামো।
চুক্তির অধীনে রাশিয়া ও ইরান আন্তর্জাতিক পরিবহন করিডোর ‘উত্তর-দক্ষিণ’ সম্পন্ন করার পাশাপাশি বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে একমত হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়েও চুক্তি হয়েছে।
এছাড়া, পর্যটনের জন্য ভ্রমণ সহজ করা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি চালু করাও চুক্তির অন্যতম প্রধান দিক। প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো এই চুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
চুক্তি প্রসঙ্গে ক্রেমলিন জানিয়েছে, এটি রাশিয়া ও ইরানের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার পাশাপাশি অঞ্চলজুড়ে তাদের প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি শুধু দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করার উদ্যোগ নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে নতুনভাবে দিকবদল ঘটবে।
সূত্র: আরটি