গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর নতুন করে রহস্য তৈরি হয়েছে হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দাকে ঘিরে। দীর্ঘদিন জনসম্মুখে না আসায় তাঁর অবস্থান ও স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নানা গুজব ও জল্পনা।
গত ২৪ ঘণ্টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) আবু উবাইদাকে নিয়ে করা হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি পোস্ট। কেউ বলছেন, তিনি হত্যাচেষ্টায় গুরুতর আহত হয়েছেন; কেউ আবার অনানুষ্ঠানিক সূত্রে জানাচ্ছেন, তিনি সুস্থ আছেন। এতে করে মুখপাত্র আবু উবায়দার ভাগ্য নিয়ে অনলাইনে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা ও মনস্তাত্ত্বিক লড়াই।

গুজবের ঝড়: ‘গুরুতর আহত’ না কি ‘শাহাদাতের নিশ্চয়তা’?
মঙ্গলবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, কাসসাম ব্রিগেডের এক কমান্ডারের বরাতে খবর এসেছে, আবু উবায়দাকে টার্গেট করে চালানো হামলায় তিনি গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। এখন তিনি বিশেষ চিকিৎসা তত্ত্বাবধানে আছেন এবং অবস্থা স্থিতিশীল। ওই সূত্রগুলো আরও বলছে, হত্যাচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এই দাবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, হাজারো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী তা শেয়ার করেন এবং তাঁর সুস্থতা কামনা করেন।
অন্যদিকে, কিছু ব্যবহারকারী ধারণা করছেন, আবু উবায়দা হয়তো শহীদ হয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁর অনুপস্থিতিই তার প্রমাণ। তবে অনেকে সতর্ক করেছেন, এসব খবরের পেছনে দখলদার বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চলছে। তাঁদের মতে, প্রতিরোধের ওপর চাপ সৃষ্টি করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শহিদের খবর ঘোষণার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই সবাইকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উদ্বেগ, দোয়া আর প্রতিরোধের প্রতি আস্থা
বিভিন্ন গুজবের পর আরব ও ফিলিস্তিনি মহলে ছড়িয়েছে উদ্বেগ আর প্রার্থনার ঢেউ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ অসংখ্য পোস্টে মানুষ প্রার্থনা করেছেন, আল্লাহ যেন আবু উবাইদাকে হেফাজতে রাখেন। অনেকে আবার তাঁর পুরোনো বক্তব্য ও ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে লিখেছেন, আবু উবায়দা এখন প্রতিরোধের প্রতীক।
অন্যদিকে, অনেকেই জানিয়েছেন—তাঁদের মতে, প্রতিরোধ বাহিনীর নীরবতা একটি সচেতন কৌশল।
একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির সময় প্রতিরোধ নেতাদের প্রকাশ্যে আসা ছিল একটি ভুল, যা আর হবে না। ইনশাআল্লাহ, আবু উবাইদা জীবিত আছেন। যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলে গাজার সারায়া ময়দানে তিনিই বিজয়ের ভাষণ দেবেন।’
প্রেক্ষাপট: রহস্যে ঘেরা ‘সবুজ মুখোশধারী’
কাসসাম ব্রিগেডের সামরিক মুখপাত্র। ছদ্মনাম আবু উবাইদা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ‘তুফানুল আকসা’ অভিযান ঘোষণা করার পর থেকেই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সবচেয়ে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।
তাঁর বক্তব্যে যেমন দখলদার ইসরায়েলের জন্য থাকে কড়া সতর্কবার্তা, তেমনি প্রতিরোধের সমর্থকদের জন্য থাকে সাহস ও আশার বার্তা।
এই কারণেই তিনি দ্রুত দখলদার বাহিনীর প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। ২০২৫ সালের আগস্টে ইসরায়েল দাবি করে, এক বিমান হামলায় আবু উবায়দা নিহত হয়েছেন। তবে হামাস সে সময় তা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি। ফলে তাঁর অনুপস্থিতি প্রতিরোধ নেতৃত্বকে ঘিরে থাকা রহস্যেরই অংশ হয়ে থাকে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিকল্পিত গোপনীয়তাই আসলে এক ধরনের নিরাপত্তা কৌশল। যার উদ্দেশ্য নেতৃত্বকে সুরক্ষিত রাখা এবং শত্রুকে বিভ্রান্ত করা।
সূত্র: রুয়্যা নিউজ











