মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

শান্তিতে নোবেল পেলেন ইসরায়েলের সমর্থক চরম ইসলাম বিদ্বেষী মারিয়া মাচাদো

শান্তিতে নোবেল জয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো
শান্তিতে নোবেল জয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো

অপ্রত্যাশিত এক জয়—নিজেকেও যেন অবাক করেছে। শান্তিতে নোবেলজয়ী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণার পর ভেনিজুয়েলার বিরোধী রাজনীতিক মারিয়া কোরিনা মাচাদো বলেন, ‘আমি এখনো বিশ্বাসই করতে পারছি না… এটা কীভাবে সম্ভব!’

নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ভেনিজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় দীর্ঘদিনের ভূমিকা ও একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছে মাচাদোকে। কমিটির ভাষায়, ‘যারা গণতন্ত্রের পক্ষে সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়ায়, তাদের সম্মান জানানো জরুরি।’

রাজধানী কারাকাসে ১৯৬৭ সালে জন্ম মাচাদোর। পেশায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়ার্ল্ড ফেলোস প্রোগ্রাম’-এর সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০২ সালে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘সুমাতে’ গঠন করে রাজনীতিতে আসেন। বর্তমানে তিনি বিরোধী দল ‘ভেন্তে ভেনিজুয়েলা’–এর জাতীয় সমন্বয়ক।

২০১৪ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন নেতৃত্বস্থানীয় মুখ। পরে মাদুরো সরকারের নিষেধাজ্ঞায় ১৫ বছরের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় তাঁকে।

সরকারের বিরোধিতা করায় আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হন মাচাদো। তাঁর ঘনিষ্ঠ অনেক উপদেষ্টা গ্রেপ্তার বা নির্বাসিত হন। ২০২৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট তাঁকে দেয় ‘সাখারভ পুরস্কার’।

একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে শান্তিতে নোবেলের জন্য মনোনয়ন দেয়। অবশেষে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হলো মারিয়া কোরিনা মাচাদোর নাম।

ওয়াশিংটনের সমর্থনপুষ্ট মাচাদো

ভেনেজুয়েলার মার্কিনবিরোধী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে সরাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থন পেয়েছেন মারিয়া কোরিনা মাচাদো। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাদুরোকে ‘বিশ্বের অন্যতম বড় মাদক পাচারকারী’ আখ্যা দিয়ে তাঁর গ্রেপ্তারের তথ্য দিলে ৫ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন। ভেনেজুয়েলা সরকার একে ‘করুণ ও হাস্যকর পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করে।

নিউইয়র্ক টাইমস-এর তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র বিরোধীদলীয় নেতা এডমুন্ডো গনসালেসকে ভেনেজুয়েলার বৈধভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

সে সময় ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এডমুন্ডো গনসালেস শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের কণ্ঠ ও ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে আছে লাখো মানুষ, যারা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। এই স্বাধীনতাকামীদের নিরাপদ ও জীবিত থাকা উচিত।’

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক চান মাচাদো

মাচাদোর জয় ইসরায়েলে উচ্ছ্বাসের জন্ম দিয়েছে। কারণ, মাচাদো এর আগেই প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ও তা আরও জোরদারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ভেনিজুয়েলা ২০০৮–০৯ সালের গাজা যুদ্ধের সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের আমলে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘আই নিউজ ২৪’ জানিয়েছে, মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল ‘ভেন্তে ভেনিজুয়েলা’ ২০২০ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দল ‘লিকুদ’–এর সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি সাক্ষর করে। ওই চুক্তির লক্ষ্য ছিল দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা। এতে রাজনৈতিক, মতাদর্শিক, সামাজিক, কৌশলগত ও নিরাপত্তা–সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতার অঙ্গীকার করা হয়।

মাচাদো প্রকাশ্যে বলেন, ভেনিজুয়েলার গণতান্ত্রিক শক্তি ও ইসরায়েলের একটি নির্দিষ্ট শত্রু আছে—তা হলো, ‘বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও শান্তিকে ধ্বংসকারী অপরাধী শক্তি।’

তিনি বলেন, ভেনিজুয়েলা ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করেছে। তাঁর মতে, ইরানের মতো হুমকির মোকাবিলায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা এখন কৌশলগতভাবে জরুরি।

তবে তাঁর দল ইউরোপের কিছু চরম দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে—যাদের মধ্যে কেউ কেউ ইহুদিবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত। এতে ইসলামবিদ্বেষ ও বিদেশিবিরোধী মনোভাব নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে মাচাদো উদারনৈতিক নীতির পক্ষে। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান—বিশেষ করে ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি—বেসরকারিকরণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালুর কথাও বলেছেন।

সব মিলিয়ে, মাচাদোর জয় দিনের অন্যতম আলোচিত খবর হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মূল আলোচনায় ছিল ট্রাম্পের পুরস্কার না পাওয়া নিয়ে বিতর্ক।

আরো পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন