মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার জবাবে যা বলল হামাস

37133188-1740336715

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার জবাব মধ্যস্থতাকারীদের হাতে তুলে দিয়েছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের লক্ষ্যে তারা ব্যাপক পরামর্শ শেষে দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করেছে।

এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, প্রস্তাব অনুযায়ী সব বন্দিকে—জীবিত কিংবা মরদেহ—মুক্তি দিতে তারা রাজি। তবে এর বিনিময়ে যুদ্ধ বন্ধ, সেনা প্রত্যাহার এবং বন্দি বিনিময়ের জন্য বাস্তব পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। হামাস জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তারা তাৎক্ষণিক আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

হামাস আরও জানায়, গাজার প্রশাসন জাতীয় ঐকমত্যে গঠিত একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি কমিটির হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে, যা আরব ও মুসলিম বিশ্বের সমর্থন পাবে। তবে গাজার ভবিষ্যৎ ও ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে জাতীয় পরিসরে; সেখানে হামাসও অংশ নেবে এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে।

হামাস নেতা মুসা আবু মারজুক আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের প্রতি তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তাঁর মতে, সবচেয়ে জরুরি হলো যুদ্ধ ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তবে গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে শুধু হামাস নয়, জাতীয় ঐকমত্যই চূড়ান্ত হবে।

তিনি জানান, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো একমত যে, গাজার প্রশাসন স্বাধীন ব্যক্তিদের হাতে দেওয়া হবে এবং এর রেফারেন্স হবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। মারজুক বলেন, হামাস ইতিমধ্যে মিসরের দেওয়া একটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে। সেখানে শান্তি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু মৌলিক উত্তর অন্তর্ভুক্ত আছে। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রকেও ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিবাচক হতে হবে।

৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্দি ও মরদেহ হস্তান্তরের প্রসঙ্গে মারজুক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হলে হামাস তাদের অস্ত্র সেই রাষ্ট্রকে হস্তান্তরে প্রস্তুত থাকবে। তাঁর ভাষায়, ‘যে গাজা শাসন করবে, অস্ত্রও তার হাতেই থাকবে।’

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মুহাম্মদ নাজাল বলেন, সংগঠনটি খুব শিগগিরই প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা নিয়ে তাদের অবস্থান জানাবে। তাঁর দাবি, হামাস আন্তরিকভাবে সমঝোতা চায়, মূলত যুদ্ধ ও গণহত্যা বন্ধ করার জন্য। হামাস কোনো হুমকি বা চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।

নাজাল আরও জানান, হামাস সোমবার সন্ধ্যায় ট্রাম্পের প্রস্তাব হাতে পেয়েছে। এ নিয়ে তাদের নানা মন্তব্য থাকলেও সংগঠনটি এমন সমাধান খুঁজছে, যা গাজার গণহত্যা বন্ধে সহায়ক হবে।

এর আগে ট্রাম্প হামাসকে রোববার ওয়াশিংটন সময় সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে জবাব দিতে বলেছেন। তিনি ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, গাজা চুক্তি হলে হামাসের অবশিষ্ট যোদ্ধাদের জীবন রক্ষা পাবে। এটিকে তিনি ‘শেষ সুযোগ’ আখ্যা দিয়ে সতর্ক করে বলেন সমঝোতা না হলে হামাসের ওপর ‘অভূতপূর্ব নরকদ্বার’ উন্মুক্ত হবে।

হোয়াইট হাউসও জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামাসের জবাবের অপেক্ষায় আছেন। ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনাটি গ্রহণযোগ্য এবং তারা আশা করছেন হামাসও তা মেনে নেবে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউস গাজার যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করে। এতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, পরবর্তী পুনর্গঠন কর্মসূচি এবং গাজার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের কথা উল্লেখ ছিল।