মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির শাসনে কেমন আছে আরাকানের রোহিঙ্গারা 

ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

গত ২৭ আগস্ট বুথিডং টাউনশিপের সাইন হ্নিন পিন গ্রামের বর্তমান প্রধান মি. ইসলাম ও তাঁর আপন ভাইকে অপহরণ করে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। তাঁদের বিরুদ্ধে আরসার সাথে যোগসূত্রের অভিযোগ আনা হয়। এর আগে আরাকান আর্মিই মি. ইসলামকে গ্রাম প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। অপহরণের পর থেকে দুই ভাইয়ের কোনো খোঁজ মেলেনি।

এ ছাড়া ইয়োমা গ্রামের সাবেক প্রশাসক মোহাম্মদ মিয়াকে মে মাসে আটক করে এএ। এএ-র হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যু হয় তাঁর। তবে পরিবারকে ইসলামি বিধি মেনে দাফনের অনুমতিও দেওয়া হয়নি।

উত্তর মংডুর কিয়াউক হ্লাই গার গ্রামের এক রোহিঙ্গা চিকিৎসার জন্য এএ’র অনুমতিতে বাংলাদেশে যান। ফেরার পর তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। একইভাবে ২৮ আগস্ট মংডুর থায়েত ওক গ্রামের তিন যুবক বাংলাদেশ থেকে খাদ্যপণ্য আনতে এএ’র অনুমতি নিয়ে লালদিয়া দ্বীপে যান। ফেরার পর তাঁদের আটক করে ন্গা খু ইয়্যা শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা এখনো সেখানেই বন্দী।

স্বাধীনতাকামী শক্তি হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করলেও এএ রোহিঙ্গাদের ওপর আরোপ করেছে নানা বিধিনিষেধ। এসব বৈষম্যমূলক প্রথার ধারাবাহিকতায় তীব্র হয়েছে রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট।

চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা

রোহিঙ্গাদের চলাফেরায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গ্রামের বাইরে যাওয়া, চিকিৎসা নেওয়া, পড়াশোনা বা আত্মীয়দের দেখতে যাওয়ার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত।

জীবিকায় বাধা

রোহিঙ্গাদের জীবিকা ও ব্যবসায়ও নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এএ। মাছ ধরা, চাষাবাদ কিংবা আন্তগ্রাম বাণিজ্য, সব ক্ষেত্রেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে পরিবারগুলো চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ছে।

কর ও অর্থ আদায়

আরাকান আর্মি (এএ) রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ইচ্ছেমতো কর বসাচ্ছে। এসব অর্থ আদায় করা হচ্ছে ভয়-ভীতি দেখিয়ে। এতে অতি দরিদ্র পরিবারগুলো বেঁচে থাকার সংগ্রামের পাশাপাশি এএ–র কার্যক্রমে অর্থ জোগাতে বাধ্য হচ্ছে।

জমি দখল ও উচ্ছেদ

রোহিঙ্গাদের জমি দখল করছে এএ। কখনো সামরিক ঘাঁটি গড়তে, কখনো নতুন বসতি স্থাপন করতে, আবার কখনো রাখাইনদের হাতে জমি তুলে দিতে এ ধরনের দখল চলছে। এতে রোহিঙ্গারা নিজেদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি হারাচ্ছে, হচ্ছে বাস্তুচ্যুত।

অপহরণ ও মিথ্যা অভিযোগ

রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি থেকে অপহরণ করছে এএ। অভিযোগ আনা হয়, তাঁরা নাকি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহযোগী।

বেশির ভাগ অভিযোগের কোনো প্রমাণ থাকে না। এটি মূলত অপহরণ ও আটককে বৈধ করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

অনেককে বিনা বিচারে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারগুলো অনিশ্চয়তায় থাকে, প্রিয়জনরা ফিরবেন কি না। কেউ কেউ আর ফেরেন না, কেউ ফিরে এলেও জেরা, নির্যাতন বা জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত হতে হয়।

এসব কর্মকাণ্ডে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ সর্বক্ষণ আশঙ্কায় থাকে, কখন কোন মিথ্যা অভিযোগে তাঁদের ওপর বিপদ নেমে আসে।

এ ধরনের অপহরণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) অন্তর্বর্তী নির্দেশনাও উপেক্ষিত হচ্ছে। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে টার্গেট করা হচ্ছে, আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, এমনকি চলমান গণহত্যার প্রমাণও নষ্ট করা হচ্ছে।

এসব কর্মকাণ্ড রোহিঙ্গাদের আরও প্রান্তিক করে তুলছে। তাঁদের বেঁচে থাকার সুযোগ সীমিত হচ্ছে, বাড়ছে বিচ্ছিন্নতা,  তৈরি হচ্ছে ভয় ও শোষণের এক কঠিন পরিবেশ।