জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আরাকানে ৭ হাজার ১০০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করেছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আরাকানে ক্রমবর্ধমান এই হত্যাযজ্ঞ ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতার উজ্জ্বল নমুনা ও জ্বলন্ত সাক্ষী। প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গ্রাম পোড়ানো এবং গণহারে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও উল্লেখ করা হয়, রাজনৈতিক কারণে অন্তত ২৯ হাজার ৫৬০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর মধ্যে ২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা এখনো সেনা-নিয়ন্ত্রিত আদালতে ন্যায্য বিচারের অনিশ্চয়তায় বন্দী জীবন পাড় করছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, আরাকানে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করার পর থেকে কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, কেবল ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তারা যুক্ত হয়েছে আগেই আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গার সঙ্গে, যারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে আশ্রয় নিয়েছিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফোল্কার ট্যুর্ক বলেছেন, রোহিঙ্গা ও রাখাইন—উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ এখনো সংঘাতের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করছে। সেনাবাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলার ধারা অব্যাহত রেখেছে।
ট্যুর্ক জানান, সেনারা জোর করে মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে, গুম ও স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তারের মতো কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তারা সম্পদ পুড়িয়ে ধ্বংস করছে এবং বারবার নৃশংসতা ও নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
ট্যুর্ক বলেন, পূর্বের অপরাধের কারণে সেনাবাহিনীকে জবাবদিহির মুখোমুখি না করতে পারায়, সেখানে বর্বরতা থামছে না। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো দমন-পীড়নের সময় যে ভিডিওচিত্র ও ধ্বংসযজ্ঞের ছবি দেখা গিয়েছিল, আজ আবারও তার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও এসব অপরাধের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার নতুন করে আহ্বান জানিয়েছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো জরুরি। এ জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ট্যুর্ক জোর দিয়ে বলেছেন, মিয়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে চলমান অকারণ সহিংসতা বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন, বহু বছর ধরে সহিংসতা, ক্ষুধা ও বাস্তুচ্যুতির শিকার মানুষগুলোকে সেনাবাহিনী মানবিক সহায়তা থেকেও বঞ্চিত করেছে। তাঁদের জন্য দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এসব চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন জরুরী অর্থায়ন। তিনি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, যেন সব পক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে প্রতিশ্রুত সহায়তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হয় এবং তা বিপদগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছায়। পাশাপাশি তিনি আন্তর্জাতিক উদ্যোগকে সমর্থনের আহ্বান জানান, যাতে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা যায়।
সূত্র: আল জাজিরা











