মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

সিনওয়ারের ভবিষ্যদ্বাণীই সত্যি হতে চলেছে: সাবেক ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা

ইয়াহইয়া সিনওয়ারের সাথে, গাজার পথ ধরে
ইয়াহইয়া সিনওয়ার। ছবি : আল জাজিরা

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক অপারেশন প্রধান ইসরায়েল জিভ বলেছেন, হামাস নেতা ইয়াহইয়া সিনওয়ারের ভবিষ্যদ্বাণীই আজ সত্যি হচ্ছে। তাঁর মতে, নেতানিয়াহু সরকার গত দুই বছর ধরে সেনাবাহিনীর উদ্যোগকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে দেখাচ্ছে, কিন্তু কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দায় নিচ্ছে না।

জিভ বলেন, অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল ও চরমপন্থী জোটসঙ্গীদের চাপে থাকা এই সরকার দেশকে আবারও গাজায় স্থলযুদ্ধে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ আগেই জানা, এই পদক্ষেপ ফলপ্রসূ হবে না এবং যুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য, বন্দিদের মুক্তিও এভাবে সম্ভব না ।

তিনি অভিযোগ করেন, পুরো যুদ্ধজুড়ে নেতানিয়াহু কোনো কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেননি। লেবানন চুক্তি থেকে শুরু করে সিরিয়া নিয়ে সমঝোতা, বন্দি বিনিময় কিংবা ইরানবিরোধী হামলা, সবই হয়েছে মার্কিন ইঙ্গিতে। সেনাবাহিনী উদ্যোগ নিলেও চূড়ান্ত অনুমোদন এসেছে হোয়াইট হাউস থেকে।

জিভের ভাষায়, সময় ক্ষেপণ করতে ও ট্রাম্পের সমর্থন পেতে নেতানিয়াহু গাজায় বড় ধরনের সামরিক সাফল্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন, তা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ইসরায়েল এখন ‘গাজার ফাঁদে’ পা বাড়াচ্ছে, যেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি ফাঁসির মঞ্চের দিকে শেষবারের মতো এগিয়ে যাচ্ছে।

জিভ বলেছেন, ইসরায়েলের বর্তমান অবস্থা দ্রুতগতিতে খাদের দিকে ছুটে চলা বাসের মতো। আর তার চালক হচ্ছেন এক ‘অচল’ ব্যক্তি। তাঁর মতে, নেতানিয়াহু থামতে বা দিক বদলাতে অক্ষম। স্মোত্রিচ ও হারেদি গোষ্ঠীর চাপে পড়ে সবকিছু করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্মোত্রিচ গাজা দখলে সামরিক অভিযানের পক্ষে চাপ দিচ্ছেন, আর হারেদিদের একমাত্র আগ্রহ বাজেট ও সেনাসেবার ছাড় আইন। বাকি মন্ত্রীদের তিনি বলেছেন দিয়েছেন ‘সুতোয় বাঁধা পুতুল’।

জিভের মতে, গাজা দখল যুদ্ধের কোনো লক্ষ্য পূরণ করবে না। বরং এতে দেশের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ভেঙে পড়বে এবং সেনাদের মনোবল দুর্বল হবে। কারণ, তাঁদের মূল প্রেরণা ছিল বন্দিদের ফেরানো।

তিনি বলেন, সেনাপ্রধান এখন এক গুরুতর সংকটে আছেন। একদিকে তাঁকে সেনাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য এই লক্ষ্য ধরে রাখতে হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার থেকে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আসছে না। সরকারের একমাত্র লক্ষ্য যেন রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার জন্য সময় কেনা।

বিভিন্ন পক্ষের বিপরীতমুখী প্রত্যাশা পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তুলছে। বেজালেল স্মোত্রিচ চান অন্তহীন যুদ্ধ, ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করছেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিযান শেষ হয়ে যাবে, সেনাপ্রধান বলছেন যুদ্ধ আরও কয়েক মাস চলতে পারে। কিন্তু বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নীরব, সব দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন সেনাপ্রধানদের ওপর। রাজনৈতিকভাবে এর মাশুল ভয়াবহ। গাজার অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধের কারণে সেনাবাহিনীর সব অর্জন একে একে ক্ষয়ে যাচ্ছে।

জিভ আন্তর্জাতিক দিকটিও তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’-এর অভিযোগে বিশ্ব এখন সহানুভূতি থেকে পুরোপুরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সালে যেখানে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন ছিল ৬০ শতাংশের বেশি, সেখানে এখন ৬০ শতাংশ মানুষ এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তরুণদের মধ্যে এই মনোভাব আরও তীব্র। জিভ মনে করেন, এ পরিবর্তন ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য এক ঐতিহাসিক ক্ষতি।

তিনি আরও বলেন, গত দেড় বছরে নেতানিয়াহুর সরকার বন্দি বিনিময়ের সব উদ্যোগ ব্যর্থ করেছে। হামাসের সাম্প্রতিক প্রস্তাবগুলোর জবাব না দেওয়াও সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ। সবচেয়ে বড় বৈপরীত্য হলো, হামাস ভয়াবহ আঘাত পেয়েছে, অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, অনেক নেতা নিহত হয়েছেন। তারপরও ইসরায়েলের রাজনৈতিক দুর্বলতা ও ব্যর্থতার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। যেন ইয়াহইয়া সিনওয়ার-এর ভবিষ্যদ্বাণী ধাপে ধাপে সত্যি হয়ে উঠছে। ইসরায়েলের ভেতরের দুর্বলতা আর ভাঙনের কারণেই, যেন কবর থেকেই সিনওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় বিজয় অর্জিত হয়েছে।’

সূত্র: কুদস নেটওয়ার্ক