ভারতে এক দশকের বেশি সময় ধরে আশ্রয় নেওয়ার পর গত মে মাসে একদল রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন নোবেল হোসেন (ছদ্মনাম), যিনি নিরাপত্তার কারণে আসল নাম প্রকাশ করেননি।
হোসেন আরব নিউজকে বলেন, তাঁকে তাঁর স্ত্রীসহ অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গাকে সামরিক বিমানে করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে মিয়ানমারের উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রে নিয়ে গিয়ে ভোররাতে ছোট নৌকায় নামানো হয়। শুরুতে তাঁদের হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছিল। কিছুক্ষণ পর বাঁধন খোলা হলেও একপর্যায়ে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে আধঘণ্টার মতো সাঁতার কাটেন। অবশেষে স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করেন।
৫৫ বছর বয়সী এ রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, ‘২০১৩ সালে ভারতে এসেছিলাম নিরাপত্তার আশায়। ভেবেছিলাম অন্তত প্রাণে বাঁচব। কিন্তু ভারত সরকার আমাদের আবার সেই মৃত্যুঝুঁকির মুখে ঠেলে দিল। আমার স্ত্রী ক্যানসার রোগী, আমরা প্রতিদিন আতঙ্কে কাটাই।’
আরেক রোহিঙ্গা শরণার্থী জানান, তাঁর ভাইও ওই দলে ছিলেন। বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের নামে স্থানীয় থানায় ডেকে নিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। এরপর থেকে তিনি একবারই সংক্ষিপ্ত ফোনালাপে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন।
রোহিঙ্গা মানবাধিকারকর্মী সাবির কিয়াও মিন বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ভারতীয় সংবিধান ও মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তাঁর প্রশ্ন, ‘আফগান ও আফ্রিকান শরণার্থীরা ভারতে আশ্রয় পেলেও শুধু রোহিঙ্গাদের কেন টার্গেট করা হচ্ছে?’
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রুজ এ ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে তদন্ত শুরু করেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, মে মাস থেকে ভারত ডজনখানেক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে শত শত রোহিঙ্গাকে নির্বিচারে আটক করেছে।
ভারতের কোনো জাতীয় শরণার্থী নীতি নেই, দেশটি ১৯৫১ সালের শরণার্থী সনদেও স্বাক্ষর করেনি। বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ভারতে বসবাস করছেন, তাঁদের অর্ধেকের বেশি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থায় নিবন্ধিত।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালালে লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন। সাম্প্রতিক সময়ে আরাকানে বৌদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের ওপর দমন পীড়ন চালাচ্ছে। ফলে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা এখনো আশ্রয়শিবিরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
সূত্র: এএনএ









