মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজা গণহত্যা নিয়ে আলবেনিয়ার ৩০০ আলেমের নিন্দা

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর নীরবতাকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেন, ইতিহাস তাদের এই নিষ্ক্রিয়তাকে ক্ষমা করবে না
গাজা গণহত্যা নিয়ে আলবেনিয়ার ৩০০ আলেমের নিন্দা
গাজা গণহত্যা নিয়ে আলবেনিয়ার ৩০০ আলেমের নিন্দা। ছবি : মিডল ইস্ট আই

আলবেনিয়ার প্রায় ৩০০ জন মুসলিম আলেম, ধর্মীয় নেতা ও সামাজিক কর্মী গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলাকে প্রকাশ্যে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক যৌথ ঘোষণায় তারা বলেন, অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে মুসলমানরা আর নীরব থাকতে পারে না।

বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তারা পরিকল্পিতভাবে বেসামরিক জনগণকে টার্গেট করছে এবং ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয় এটা কোনো যুদ্ধ নয়; বরং একতরফা গণহত্যা। একটি অবরুদ্ধ জাতির বিরুদ্ধে এই হামলা চালানো হচ্ছে, যাদের আত্মরক্ষার কোনো ক্ষমতা নেই।

তারা কঠোর সমালোচনা করেন সেইসব সরকারকে, যারা এখনো ইসরায়েলকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে। একই সঙ্গে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর নীরবতাকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেন, ইতিহাস তাদের এই নিষ্ক্রিয়তাকে ক্ষমা করবে না।

বিবৃতিতে মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় নিজেদের সরকারকে চাপ সৃষ্টি করতে, ইসরায়েলপন্থী কোম্পানিগুলোকে বয়কট করতে এবং নিঃশর্তভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে। ঘোষণায় বলা হয়, গাজার জন্য শুধু দোয়া যথেষ্ট নয়; আমাদের কথা বলতে হবে, পদক্ষেপ নিতে হবে এবং যেখানে অন্যায় আছে সেখানে এর বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে।

আলবেনীয় ফিলিস্তিনপন্থী কর্মী বাকী গোকশাই এই ঘোষণাকে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাহসী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এটি আলবেনীয় সরকারের ইসরায়েলপন্থী নীতি পুনর্বিবেচনায় চাপ সৃষ্টি করবে। তার অভিযোগ, এতদিন আলবেনীয় মুসলিম নেতৃত্ব কেবল নামাজে দোয়া পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছে, বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

গোকশাই বলেন, আমরা নিজেরাই যুদ্ধাপরাধ ও জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়েছি, চামেরিয়ায় গ্রিক গণহত্যা থেকে শুরু করে কসোভোর গণহত্যা পর্যন্ত। তাই গাজার মানুষের কষ্ট আমাদের ইতিহাসের সঙ্গেই গভীরভাবে মিলে যায়। তার মতে, প্রধানমন্ত্রী এদি রামা মুসলিম সমাজের এই নীরবতাকে কাজে লাগিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করেছেন।

আলবেনীয় ইতিহাসবিদ অলসি জাজেক্সির মতে, এই ঘোষণাটি আলবেনীয় নাগরিক সমাজের হতাশার প্রতিফলন। তিনি বলেন, সরকার গাজার হত্যাযজ্ঞ নিয়ে নীরব থেকেছে, অথচ প্রধানমন্ত্রী রামা ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন, মুসলিম সমাজের প্রতিক্রিয়ার কোনো তোয়াক্কা না করেই।

এর মধ্যে সম্প্রতি ইসরায়েলের সরকারি আরবি ভাষার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে মুসলমানদের ‘পঞ্চম কলাম’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ইউরোপ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিধ্বনি নয়, বরং ইউরোপজুড়ে লাখো মুসলমানকে নতুন করে টার্গেট করার ইঙ্গিত।

এদিকে আলবেনিয়ার প্রধান রাব্বি ইয়োয়েল কাপলানকেও বিতর্কিত ভূমিকায় দেখা গেছে। তিনি ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে প্রার্থনা পরিচালনা করেছেন এবং প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে তিনি গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক জ্বালানি পর্যবেক্ষণ সংস্থা অয়েল চেইঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ব্রাজিলের পর ইসরায়েলকে পরিশোধিত জ্বালানি সরবরাহকারী শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে আলবেনিয়া অন্যতম।

আরো পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন