মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজার জনগণকে লিবিয়ায় পুনর্বাসন নিয়ে গোপন বৈঠক

গাজার জনগণকে লিবিয়ায় পুনর্বাসন নিয়ে গোপন বৈঠক
গাজার জনগণকে লিবিয়ায় পুনর্বাসন নিয়ে গোপন বৈঠক। ছবি : আরাবি ২১

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত লিবীয় সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গোপনে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল গাজা থেকে বিতাড়িত লাখো ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় পুনর্বাসনের পরিকল্পনা।

সূত্র জানায়, আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন লিবিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইব্রাহিম দেবাইবা, যিনি প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দেবাইবার আত্মীয়। যদিও ফিলিস্তিনিরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে করা এই প্রস্তাব আগেই স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এক লিবীয় সূত্রের দাবি, এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আরেক সূত্র জানায়, ট্রিপোলির অনেক নেতা এ বিষয়ে গোপনে সক্রিয় রয়েছেন, তবে দেশে প্রবল ফিলিস্তিন-পন্থী জনমতের কারণে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে দেওয়া হচ্ছে না।

মার্কিন প্রশাসন কিছু লিবীয় নেতাকে অর্থনৈতিক সহায়তা ও নানা সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এমনকি ইব্রাহিম দেবাইবাকে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের জব্দকৃত লিবীয় সম্পদ মুক্ত করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। এর আগে ট্রাম্পের উপদেষ্টা মসাদ বুলোসও দেবাইবার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, যদিও তিনি পুনর্বাসন আলোচনায় নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনিদের জীবনমান উন্নয়নে নতুন সমাধান খুঁজছেন, যার মধ্যে পুনর্বাসনের বিষয়টিও রয়েছে।

পূর্ব লিবিয়ার শাসক জেনারেল খলিফা হাফতারকেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাকে জানানো হয়েছে, যদি তিনি ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনে রাজি হন, তবে দেশের তেলসম্পদে তাঁর নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানো হবে।

তবে প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দেবাইবা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর সরকার কোনোভাবেই ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের মতো ‘অপরাধে’ জড়াবে না।

এক ইউরোপীয় কূটনীতিক সতর্ক করে বলেছেন, যদি জোর করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়, তবে ফিলিস্তিনিরা এক বিপর্যয় থেকে আরেক বিপর্যয়ে পড়বে। গাজা থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের পাঠানো হবে রাজনৈতিকভাবে অস্থির ও বিভক্ত লিবিয়ায়, যেখানে নিরাপত্তা ও মৌলিক সেবার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর ফলে নতুন করে ইউরোপমুখী শরণার্থী স্রোত শুরু হতে পারে। এতে ভূমধ্যসাগরে প্রাণ হারানোর ঝুঁকি বাড়বে, আর যারা ইউরোপ পৌঁছাতে সক্ষম হবে, তাদেরও সহজে গ্রহণ করা হবে না, যেমনটা ঘটেছিল সিরীয় শরণার্থীদের ক্ষেত্রে।

এক আরব কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, ইসরায়েলের জাতিগত নির্মূল পরিকল্পনায় সহযোগিতা করলে লিবিয়ায় ব্যাপক জনরোষ সৃষ্টি হবে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল প্রকাশ্যেই গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের পরিকল্পনা বিবেচনা করছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এ বিষয়ে তাঁরা কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছেন। গত মাসে ইসরায়েলের কৃষিমন্ত্রী আভি ডিখটারও বলেন, লিবিয়া ফিলিস্তিনিদের জন্য আদর্শ গন্তব্য হতে পারে। তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক সহায়তা পেলে ফিলিস্তিনিরা আনন্দের সঙ্গেই গাজা ছাড়বে। তিনি আরও যুক্তি দেন, লিবিয়ার বিশাল ভূখণ্ড ও সমুদ্রতীর গাজার মতো, আর পুনর্বাসনে বিনিয়োগ হলে দেশটির অর্থনীতিও লাভবান হবে।

২০২৩ সালে লিবিয়ার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাজলা আল-মনকুশ ইতালিতে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছিলেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই লিবিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তিনি দাবি করেন, বৈঠকটি প্রধানমন্ত্রী দেবাইবার নির্দেশে এবং তাঁর সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করেই হয়েছিল।

সূত্র: আরাবি ২১

আরো পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন