কথিত ‘বৃহত্তর ইসরায়েল বা গ্রেটার ইসরায়েল’ পরিকল্পনার কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে আল ইত্তেহাদুল আলামিয়্যু লি-উলামাইল মুসলিমীন। সংগঠনটির দাবি, এই পরিকল্পনায় শুধু ফিলিস্তিন নয়; বরং জর্ডান, মিসরসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর অংশকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাদের মতে, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও বৈশ্বিক চুক্তির প্রকাশ্য লঙ্ঘন, অবৈধ দখল এবং এক ভয়াবহ আগ্রাসী প্রকল্প।
সংগঠনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলি দখলদারদের এই পরিকল্পনা তাদের ঔদ্ধত্য ও আগ্রাসী নীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। তারা ফিলিস্তিনের জমি দখল করছে, পবিত্র স্থানগুলোতে হস্তক্ষেপ করছে, অবৈধ বসতি স্থাপন করছে, জেরুজালেমকে ইহুদীকরণের চেষ্টা করছে এবং ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করছে। এসব কর্মকাণ্ড আসলে হত্যাযজ্ঞ, অনাহার ও গণহত্যার একটি সুপরিকল্পিত অংশ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ সংক্রান্ত মন্তব্য মুসলিম উম্মাহকে টার্গেট করে সাজানো ভয়াবহ এক ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। আজ গাজা শুধু ফিলিস্তিনের নয়; পুরো মুসলিম বিশ্বের রক্ষাকবচ। ফিলিস্তিনিরা উম্মাহর পক্ষ হয়ে প্রতিরোধ করছে, রক্ত ও ত্যাগের মূল্য দিচ্ছে।
সংগঠনটির অভিযোগ, আরব ও মুসলিম বিশ্বের নীরবতা এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহযোগিতাও দখলদার ইসরায়েলকে আরও আগ্রাসী করেছে। ফলে ফিলিস্তিনিরা একা লড়াই করছে হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞের মুখে।
আল ইত্তেহাদ মুসলিম নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিভাজন দূর করে সত্যিকারের ঐক্য গড়ে তুলতে। আলেম-ওলামা ও চিন্তাবিদদের অনুরোধ করেছে সাহসী ভূমিকা নিতে এবং মুসলমানদের চেতনা জাগিয়ে তুলতে। পাশাপাশি সাধারণ মুসলমানদেরও আহ্বান জানানো হয়েছে বস্তুগত ও নৈতিক সহায়তার দায়িত্ব পালনে। আন্তর্জাতিক সমাজকে সতর্ক করে সংগঠনটি বলেছে, নীরবতা মানেই এই ভয়াবহ অপরাধে অংশীদার হয়ে যাওয়া।
সংগঠনটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের স্বাভাবিক সম্পর্ক তারা প্রত্যাখ্যান করছে। তাদের মতে, এ সম্পর্কই ইসরায়েলের আগ্রাসী পরিকল্পনাকে শক্তি জোগায়। সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো— মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে সব উপায়ে সহায়তা এবং দখলদার রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
বিবৃতিতে আরও সতর্ক করে বলা হয়, সম্প্রসারণবাদী যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় মুসলিম উম্মাহকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপই কেবল ইসরায়েলকে থামাতে পারে, ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারে এবং জেরুজালেমসহ পবিত্র স্থানগুলোকে রক্ষা করতে পারে।
এদিকে নেতানিয়াহুর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ বিষয়ক মন্তব্যে আরব বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী দেশ মিসর ও জর্ডান একে বড় হুমকি হিসেবে দেখছে।
জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে গুরুতর উসকানি ও বিপজ্জনক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মন্তব্য আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, এটি রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের সরাসরি হুমকি এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের প্রকাশ্য লঙ্ঘন।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাফওয়ান আল-কুদাহ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, জর্ডান এ ধরনের প্ররোচনামূলক বক্তব্য, মিথ্যা দাবিদাওয়া ও বিভ্রান্তিকর কল্পনা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের এসব অবাস্তব ধারণা কখনোই জর্ডান বা আরব দেশগুলোর ক্ষতি করতে পারবে না এবং ফিলিস্তিনিদের বৈধ ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার খর্ব করতে পারবে না।
সূত্র: আরাবি ২১











