মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

আফগানিস্তানে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে তালেবান

আফগানিস্তান যেন পৃথিবীর এক স্বর্গোদ্যান যে কেউ দরজায় কড়া নাড়লেই তার জন্য দ্বার উন্মুক্ত
আফগানিস্তানে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে তালেবান
আফগানিস্তানে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে তালেবান। ছবি : রয়টার্স

সম্প্রতি আফগানিস্তান ঘুরে আসা বিখ্যাত তুর্কি লেখক ইয়াসিন আকতাই জানিয়েছেন, আফগানিস্তান নিয়ে গণমাধ্যমের প্রচলিত চিত্র বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। তার কথা, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর দেশটি এমন অনেক কিছু অর্জন করেছে, যা অনেকের কাছে অসম্ভব মনে হয়।

তুর্কি দৈনিক ইয়েনি শাফাক-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে আকতাই লেখেন, দেড় বছর আগে আফগানিস্তান ঘুরে আসলেও সম্প্রতি আফগান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের চতুর্থ বার্ষিকী উপলক্ষে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো দেশটি সফর করেন।
তিনি বলেন, ‘মার্কিন দখলদারিত্বে সত্যিকারার্থেই দেশটি একটি বদ্ধভূমি ছিল। তবে এই মূল্যায়ন কেবল দখলদারদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । বাস্তবতা হচ্ছে, কেউ যদি সঠিক নীতি মেনে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সম্মান করে, তাহলে আফগানিস্তান তার জন্য পৃথিবীর স্বর্গরাজ্যের মতো।’

তার এই কথার প্রমান হিসেবে তিনি মনে করিয়ে দেন, মার্কিন সেনা প্রত্যাহার সংক্রান্ত আলোচনার একটি প্রস্তাবের কথা— যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কাবুলের মার্কিন দূতাবাসে কিছু সেনা রেখে যাওয়ার অনূরোধ করা হয়। তখন তালেবানের এক প্রতিনিধি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, ‘আমরা আপনাদের একটি পিস্তল রাখতেও দেব না। যদি নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়, আমরা এ দেশের মাটিতে পা রাখা সবার নিরাপত্তা দিতে সক্ষম।’

নিবন্ধে তিনি আরও জানান, বর্তমানে আফগানিস্তান পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানাতে প্রচারণা চালাচ্ছে। যারা বৈধ পথে আসতে চান, তাদের বিনিয়োগ ও পর্যটনে আহ্বান জানানো হচ্ছে।

বিশ্বের সঙ্গে নতুন সংযোগ

তার মতে, গত চার বছরে আফগানিস্তান অনেক ধরণের উন্নয়নমূলক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। এরমধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হচ্ছে—তুর্কি এয়ারলাইনস। যেটি এখন দৈনিক সরাসরি কাবুল টু ইস্তাম্বুল রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। যা প্রায় সবসময় যাত্রী বোঝাই থাকে। আর যাত্রীদের মধ্যে আফগানিস্তানে ব্যবসা বা পর্যটনের জন্য আসা তুর্কিদের পাশাপাশি ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের মানুষও রয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্য

তাছাড়া ইস্তাম্বুল এখন আফগানিস্তান ও বিশ্বের মধ্যে প্রধান সংযোগ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। কারণ বর্তমানে ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য কেবল তুরস্ক হয়ে কাবুলে যাওয়া সম্ভব, তাই বিশ্বের নানা প্রান্তের যাত্রীদের ইস্তাম্বুলে এনে তারপর কাবুলে নেওয়া হচ্ছে।

শান্তি ও স্থিতি

আকতাই আরও লেখেন, তালেবান এবার সত্যিই ক্ষমা ঘোষণার নীতি মেনে চলছে। আগের সরকারের সঙ্গে তারা প্রতিশোধ বা হিসাব মেটানোর পথে যায়নি। বিশ্ব গণমাধ্যম এখনো তালেবানের পুরনো চিত্র প্রচার করলেও, দেশের অভ্যন্তরে তারা পুরোপুরি শান্তির ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে। ফলে বহু বছর ধরে বিদেশে থাকা লাখো আফগান এখন দেশে ফিরছেন।

তিনি বলেন, শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠাই নয়—মাদকবিরোধী পদক্ষেপও তারা পেয়েছে এক ‘অসম্ভব অর্জন’ । অনেকের ধারণা ছিল, তালেবান কখনো আফিমের এই আয়ের উৎস ছাড়বে না। কিন্তু তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার দুই বাক্যের একটি ফরমানেই আফিমের মূল উপাদান পপি চাষ বন্ধ হয়ে গেছে।

আগে যে জমিতে পপি চাষ হতো, সেখানে এখন জাফরান চাষ হচ্ছে। যদিও অর্থনৈতিকভাবে তা আফিমের সমান নয়, তবে এটি আফগানিস্তানের অন্যতম মূল্যবান কৃষিপণ্য।

সর্বশেষে আকতাই বলেন, আফগানিস্তানের সামাজিক জীবন অনেকের ধারণার মতো এতটা কঠোর নয়। বরং কিছু ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি নমনীয়।

Follow Us