মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজায় গণহত্যা-অবরোধের মধ্যে আলোচনার কোনো অর্থ নেই: খলিল আল হাইয়া

আমরা কখনোই মেনে নেব না, আমাদের জনগণের রক্ত আর কষ্ট শুধু ইসরায়েলি কূটনৈতিক ছলচাতুরির শিকার হবে।
গাজায় গণহত্যা-অবরোধের মধ্যে আলোচনার কোনো অর্থ নেই: হামাস নেতা খলিল আল হাইয়া
হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল হাইয়া। ছবি : মিডল ইস্ট আই

গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন, কঠিন অবরোধ এবং চরম খাদ্য সংকটের মধ্যে কোনো শান্তি আলোচনাই অর্থবহ নয় বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল হাইয়া। তাঁর ভাষায়, যখন শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষ গণহত্যার শিকার হচ্ছে, তখন আলোচনার জন্য কোনো বাস্তব ভিত্তিই থাকে না।

শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গণহত্যা, অনাহার আর অবরোধের মধ্যে আমাদের সন্তান, নারী ও জনগণের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। আলোচনা তখনই অর্থবহ হবে, যখন আমাদের জন্য সম্মানজনকভাবে খাদ্য ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কখনোই মেনে নেব না, আমাদের জনগণের রক্ত আর কষ্ট শুধু ইসরায়েলি কূটনৈতিক ছলচাতুরির শিকার হবে।

খলিল আল হাইয়া জানান, গত ২২ মাস ধরে চলা আগ্রাসন থামাতে হামাস রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় থেকেছে। আলোচনা চলাকালে জনগণের স্বার্থ ও প্রাণরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা প্রয়োজনমতো নমনীয়তা দেখিয়েছি, কিন্তু কখনোই আমাদের জাতীয় অবস্থানের সঙ্গে আপস করিনি।

সাম্প্রতিক আলোচনার বিষয়ে তিনি জানান, কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছিল। বিশেষ করে বন্দি বিনিময়, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং সহায়তা প্রবেশের মতো ইস্যুতে হামাসের অবস্থান ও মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবের মধ্যে মিল ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ইসরায়েল আলোচনার পেছনে সরে যায়। মার্কিন প্রতিনিধি স্টিভ উইটকভও তাতে সুর মিলিয়ে কথা বলেন। আল হাইয়ার অভিযোগ, ইসরায়েল সময়ক্ষেপণ করে গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার কৌশল নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল জাতিসংঘ ও স্থানীয় মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা নস্যাৎ করে সহায়তা বিতরণ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। একইসঙ্গে রাফার একটি বড় অংশ দখল করে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরির নামে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা করছে।

আকাশপথে মানবিক সহায়তা ফেলা প্রসঙ্গে খলিল আল হাইয়া বলেন, এগুলো আসলে লোকদেখানো আয়োজন। এর মাধ্যমে ইসরায়েলি অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা চলছে। পাঁচবার সহায়তা ফেলা মানে এক ট্রাকেরও কম খাদ্য আসে। প্রকৃত সমাধান হচ্ছে সরাসরি সীমান্ত খুলে দেওয়া এবং মর্যাদার সঙ্গে সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা, যা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত।

আরব ও মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হামাস নেতা বলেন, গাজাবাসী এখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, গণহত্যা ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। মুসলিম উম্মাহ কেন এখনো নিষ্ক্রিয়—এটা আমাদের বোঝা কঠিন। বিশ্ব যখন সরাসরি সম্প্রচারে গণহত্যা দেখছে, তখন মুসলিম জাতি নীরব দর্শক হয়ে আছে। এখনো কি সময় আসেনি অবরোধ ভাঙতে সক্রিয় হওয়ার?

তিনি বলেন, আমরা চাই মুসলিম দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করুক। বিশ্বজুড়ে বিবেকবান মানুষদের প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে, ফিলিস্তিন অভিমুখে যাত্রা শুরু করে, ইসরায়েলি দূতাবাস ও স্বার্থকেন্দ্র ঘেরাও করে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করে। মুসলিম বিশ্বের আলেমদেরও এই প্রতিরোধে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।

জর্ডানের জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, হে জর্ডানের ভাইয়েরা, অতীতে আপনারা ফিলিস্তিন সীমান্তে জীবন দিয়েছেন। আমরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখি। এবারও চাই, আপনারা সংগঠিত হয়ে গণআন্দোলন জোরদার করুন, যাতে এই গণহত্যা বন্ধ হয়, আল আকসার বিভাজন ঠেকানো যায় এবং তথাকথিত ‘বিকল্প রাষ্ট্র’ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

বিবৃতির শেষ অংশে মিসরের জনগণ ও নেতৃত্বের প্রতিও তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা জানি, মিসর একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি। আমরা বিশ্বাস করি, গাজার মানুষদের দুর্ভোগে আপনারাও ব্যথিত। কিন্তু সীমান্তের এক পাশে যখন গাজাবাসী অনাহারে মারা যাচ্ছে, তখন মিসর কি চুপ করে থাকতে পারে? আমরা বিশ্বাস করি, মহান মিসর এই পরিস্থিতিতে মুখ ফিরিয়ে রাখবে না। আমরা চাই, মিসর উচ্চকণ্ঠে বলুক—গাজাবাসী অনাহারে মরবে না, রাফা সীমান্ত আর বন্ধ থাকবে না।

সর্বশেষ