মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজায় ফিরতে না চাওয়ায় কারাগারে ৪ ইসরায়েলি সেনা

গাজা যুদ্ধের মানসিক ধাক্কা, যুদ্ধে ফিরতে না চাওয়ায় কারাগারে ৪ ইসরায়েলি সেনা
গাজা যুদ্ধের মানসিক ধাক্কা, যুদ্ধে ফিরতে না চাওয়ায় কারাগারে ৪ ইসরায়েলি সেনা । ছবি : সংগৃহীত

গাজা যুদ্ধ ঘিরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে। দখলদার বাহিনীর ‘নাহাল’ ব্রিগেডের চার সেনা গাজায় ফের যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দায়িত্ব থেকে। সেনারা বলছেন, আগের অভিযানের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে সৃষ্ট মানসিক আঘাতের কারণে তারা আর যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরতে চান না।

ইসরায়েলি টেলিভিশন ‘কান’ জানিয়েছে, অভিযুক্ত সেনারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, গাজা অভিযানের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে সৃষ্ট মানসিক ধাক্কা এখনো তারা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু সেনাবাহিনীর মেডিকেল ইউনিট তাদের ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে উপযুক্ত’ বলেই ঘোষণা দেয়। সেনারা মানসিক দুরবস্থার কথা বললেও বাহিনী তা আমলে না নিয়ে উল্টো কড়া ব্যবস্থা নেয়—তাদের কারাগারে পাঠায় এবং সামরিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়।

গাজায় কয়েক দফা অভিযানে অংশ নেওয়া নাহাল ব্রিগেডের ওই সেনারা জানান, সেসব অভিজ্ঞতা তাদের ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছে। চিকিৎসকের ছাড়পত্র থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরতে না চাওয়ায় এমন শাস্তি।

ঘটনাটি সামনে এসেছে এমন এক সময়ে, যখন দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী জনবলের সংকট, যুদ্ধ ক্লান্তি ও মানসিক অবসাদের মতো নানা সমস্যায় জর্জরিত। যুদ্ধ শেষে ঘরে ফেরা অনেক সেনার মধ্যেই ফের যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরতে অনীহার প্রবণতা বাড়ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে নতুন একটি প্রবণতার কথা সামনে এসেছে, যেটিকে বলা হচ্ছে ‘গ্রে রিফিউজাল’। এতে সেনারা পারিবারিক বা শারীরিক সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে গাজায় অভিযান চালিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় সেনাবাহিনীর জন্য নতুন সংকট তৈরি হয়েছে।

গাজায় স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে রিজার্ভ ইউনিটে কর্মরত সেনারা দীর্ঘ সময় যুদ্ধক্ষেত্রে থাকার কারণে মানসিক ও শারীরিকভাবে চরম ক্লান্তিতে ভুগছেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদাতিক ইউনিট নাহাল ব্রিগেড সরাসরি গাজার স্থল অভিযানে যুক্ত ছিল। ২০২৫ সালের মে মাসে প্রকাশিত ইসরায়েলি পত্রিকা ইয়েদিয়োত আহরোনোত-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্রিগেডের ৫০ নম্বর ব্যাটালিয়নের ১১ জন সেনা গাজায় ফেরত যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলে। তাদের মধ্যে তিনজনকে শাস্তি দেওয়া হয়, যদিও নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর সেই শাস্তি স্থগিত করা হয়।

তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গাজা যুদ্ধে অংশ নেওয়া রিজার্ভ সেনাদের অন্তত ১২ শতাংশ পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (PTSD) ভুগছেন। মানসিক এই অসুস্থতা তাঁদের সামরিক দায়িত্ব পালনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এটাই প্রথম নয়। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর অনেক সেনা দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখাচ্ছেন। বন্দি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জটিলতা বাহিনীর ভেতরে অসন্তোষ আরও বাড়িয়ে তুলছে।

এই অবস্থায় যুদ্ধ থামানো এবং বন্দি বিনিময়ের চুক্তিতে পৌঁছাতে ইসরায়েল ও হামাসের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। হামাস বলেছে, তারা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত, তবে তার আগে যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের শর্ত রয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই রয়েছেন।

সর্বশেষ