সিরিয়ার তথ্যমন্ত্রী হামজা মুস্তাফা কড়া ভাষায় বলেছেন, যারা নিজেদের দেশের বিরুদ্ধে হামলার জন্য দখলদার শক্তির সহায়তা চেয়েছে, তাদের নাম ইতিহাসে চিরতরে কলঙ্কের পাতায় লেখা থাকবে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘আল ইখবারিয়া’-কে বুধবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক দামেস্ক হামলা কোনো কৌশলগত বিজয় নয়, বরং এটি দখলদার শক্তির ভেতরের রাজনৈতিক চাপ থেকে দিশেহারা হয়ে পালানোর কৌশল মাত্র।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমিতে রাষ্ট্রের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা সিরিয়ার বৈধ অধিকার। সুয়াইদা প্রদেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানকার মানুষ রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং এখনো সিরিয়ার জাতীয় কাঠামোর শক্ত ভিত হিসেবে রয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে হামজা মুস্তাফা বলেন, সিরিয়া সবসময় রাজনৈতিক সমাধানের পথেই এগোতে চেয়েছে। এ কারণে সরকার বহুবার নমনীয় অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু এর জবাবে এসেছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, উসকানি ও সংঘাতমূলক সামরিক বাস্তবতা।
সুয়াইদার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার চাইলে কয়েক মাস আগেই সামরিক শক্তি দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারত। কিন্তু সহিংসতা এড়াতে এবং আলোচনার জন্য সুযোগ রেখে অপেক্ষা করা হয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেউ কেউ বাইরের শক্তির ওপর নির্ভর করেছে।
তিনি বলেন, এখন সুয়াইদার অনেক নাগরিক বুঝতে শুরু করেছেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করাই প্রদেশটিকে জাতীয় কাঠামোর আওতায় ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ।
এদিকে আজ সকালে ইসরায়েল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কসহ বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় একযোগে ভয়াবহ বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এই হামলার একটি লক্ষ্য ছিল কাসিউন পর্বতের কাছে অবস্থিত রাষ্ট্রপতি ভবন ‘পিপলস প্যালেস’। একইসঙ্গে দামেস্কের উমাইয়াদ স্কয়ারে অবস্থিত সামরিক সদর দপ্তরে চারটি বিমান হামলা চালানো হয়। এর আগে সেখানে দুটি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল। রুশ সংবাদমাধ্যম ‘আরটি’ জানিয়েছে, এসব হামলায় সামরিক সদর দপ্তরের ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়াও ইসরায়েলি বাহিনী ‘আল-থা’লা’ সামরিক বিমানঘাঁটি এবং তার আশপাশে একযোগে হামলা চালিয়েছে, যেখানে সিরীয় সেনাবাহিনীর সদস্য হতাহত হয়েছেন।
সুয়াইদা শহর ও আশপাশের এলাকায়ও ইসরায়েল অন্তত ১০টি বিমান হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অস্ত্র সরবরাহ কেন্দ্র ও সিরিয়ার মিত্র গোষ্ঠীগুলোর লজিস্টিক রুট।
দারা ও কুনেইত্রা প্রদেশেও চালানো হয়েছে একাধিক সমন্বিত হামলা। পূর্ব দারার ৫২ নম্বর ব্রিগেড এবং দামেস্ক-দারা মহাসড়কে অবস্থান নেওয়া ৫৪ নম্বর সামরিক ডিভিশনের বহর ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এসব অঞ্চলে এখনো টহল ও হামলা অব্যাহত রয়েছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর বরাতে জানা গেছে, সিরিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ইসরায়েল প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে। তারা জানায়, গাজার ‘৯৮ নম্বর ডিভিশন’কে সিরিয়ায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে, যেখানে প্যারাট্রুপার ব্রিগেড মোতায়েনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমান সিরিয়ার সুয়াইদা, দামেস্কসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬০টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে।
সূত্র: আরটি ও আল-ইখবারিয়া (সিরিয়া)