সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সুয়াইদায় এবং এর আশপাশে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আল জাজিরা জানিয়েছে, এসব হামলায় কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। এদিকে ইসরায়েলের প্রতি হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল সুয়াইদা পুলিশ সদর দপ্তরসহ নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা। এতে একাধিক নিরাপত্তাকর্মী হতাহত হন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলার কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে সুইদায়ে ও দারা প্রদেশে সিরিয়ার সামরিক যান ও স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলকে সিরিয়ায় হামলা বন্ধ করার অনুরোধ করেছে। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল অনুরোধে সাড়া দিয়ে জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ওই ধরনের অভিযান থেকে বিরত থাকবে।
এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আসামি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতস সুইদায়ে অবস্থানরত সিরিয়ার অস্ত্রভাণ্ডার ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার নির্দেশ দেন।
সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টম বারাক এক্সে এক পোস্টে বলেন, সুয়াইদার সাম্প্রতিক সংঘর্ষ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা প্রশমন ও গঠনমূলক সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সব পক্ষের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালাচ্ছে।
বারাক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন এক শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সমাধান চায়, যাতে দ্রুজ সম্প্রদায়, বেদুইন গোত্র, সিরিয়ার সরকার এবং ইসরায়েলি পক্ষ—সবার স্বার্থ রক্ষা পায়।
চলমান সংঘর্ষ ও সরকারের অবস্থান
সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সুয়াইদার কিছু এলাকায় এখনো থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। সরকার স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে।
মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, সুয়াইদার কেন্দ্র থেকে অবৈধ ব্যক্তিদের হটানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সুইদায়ের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমাদ আদ দালাতি শহরের ধর্মীয় নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে শহরের ভেতরে চেকপোস্ট বসানো ও সামরিক যান প্রত্যাহার সংক্রান্ত একটি সমঝোতায় পৌঁছানো হয়, যাতে পরিস্থিতি আর উত্তপ্ত না হয়।
তবে এই সমঝোতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, সশস্ত্র বিদ্রোহীরা ফের পুলিশের ওপর ‘ঝটিকা হামলা’ চালিয়েছে। তাদের সহায়তা করতে ইসরায়েলি বাহিনী আকাশপথে সিরিয়ার নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীর অবস্থানে হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন সেনা ও নিরাপত্তাকর্মী প্রাণ হারান।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমাদ আদ দালাতি জানান, শহরে বাহিনীর প্রবেশ ছিল জরুরি এবং আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী বর্তমানে শহরের বাইরে অবস্থান করছে। অভিযানের সময় যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তার দায় সরকার নেবে।
উল্লেখ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ বাহিনী সুয়াইদার অশান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে।
সূত্র: আল জাজিরা