মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে আত্মহত্যাই যেন মুক্তির পথ,গাজায় যেতে না চাইলেই কারাগারে 

গত কয়েক সপ্তাহে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যাওয়ায়, অনেক ইসরায়েলি সেনা গাজায় ফিরতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে আত্মহত্যাই যেন মুক্তির পথ,গাজায় যেতে না চাইলেই কারাগারে
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে আত্মহত্যাই যেন মুক্তির পথ,গাজায় যেতে না চাইলেই কারাগারে। ছবি : আল জাজিরা

ইসরায়েলের প্রভাবশালী দৈনিক হারেৎজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আত্মহত্যার হার আগের বছরের তুলনায় লক্ষনীয়ভাবে বেড়ে গেছে।

পত্রিকাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে অন্তত ১৫ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। আগের বছর, ২০২৪ সালে, এই সংখ্যা ছিল ২১।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আত্মহত্যাকারীদের বেশির ভাগই রিজার্ভ বাহিনীর সদস্য, যারা সাময়িকভাবে হলেও সক্রিয় দায়িত্বে ছিলেন।

ইসরায়েলি সামরিক সূত্র হারেৎজকে জানিয়েছে, আত্মহত্যা করা অনেক সেনা যুদ্ধক্ষেত্রে এমন সব ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, যা তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। 

দেড় সপ্তাহে তৃতীয় আত্মহত্যা

ইসরায়েলি চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধে অংশ নেওয়া আরও একজন সেনা আত্মহত্যা করেছেন। দেড় সপ্তাহের মধ্যে এটি তৃতীয় আত্মহত্যার ঘটনা।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ওই সেনা গাজা যুদ্ধ থেকে ফিরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সেনাবাহিনীর রেডিও জানিয়েছে, নাহাল ব্রিগেডের ওই সদস্য সোমবার সকালে গোলান মালভূমির একটি ঘাঁটিতে আত্মহত্যা করেন।

ইদিয়োত আহরোনোত পত্রিকা জানায়, এই সেনা গাজায় টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ করেছেন।

গত সপ্তাহে গাজা যুদ্ধ থেকে ফেরা গোলানি ব্রিগেডের এক সদস্য সেদি তেইমান ঘাঁটিতে নিজের ওপর গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। ওই ঘাঁটিটি নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত।

হারেৎস জানায়, আত্মহত্যার আগে সেনাটির বিরুদ্ধে সামরিক তদন্ত চলছিল। তদন্ত শেষে তার আগ্নেয়াস্ত্র ফিরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি এক সহকর্মীর অস্ত্র নিয়ে নিজের ওপর গুলি চালিয়ে দেন। 

একই সপ্তাহে ইসরায়েলি নিউজ পোর্টাল ওয়ালা জানায়, গাজা ও লেবাননের দীর্ঘ ও ভয়াবহ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা এবং মানসিক যন্ত্রণার কারণে আরেক সেনা আত্মহত্যা করেছেন।

মধ্যপ্রাচ্য

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৪ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। তাদের অধিকাংশই যুদ্ধঘটিত মানসিক ট্রমার শিকার ছিলেন।

গত কয়েক সপ্তাহে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যাওয়ায়, অনেক ইসরায়েলি সেনা গাজায় ফিরতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ইতিহাসের অন্যতম বড় সংকটে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখন তাদের ইতিহাসের অন্যতম বড় জনবল সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউট। সংস্থাটি বলছে, বহু ফ্রন্টে একযোগে যুদ্ধ ও দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে সেনাবাহিনীর এখন অতিরিক্ত হাজার হাজার সেনার প্রয়োজন।

সংস্থাটির এক জরিপে দেখা গেছে, ৭১ শতাংশ ইসরায়েলি নাগরিক মনে করেন, কট্টরপন্থী হারেদি ইহুদিদের সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি দিলে অন্যদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের আগ্রহে চিড় ধরবে। একই সঙ্গে ৪২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন, হারেদিদের ছাড় দিলে তাঁদের সন্তানদের সেনাবাহিনীতে পাঠাতে উৎসাহিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বর্তমানে সংকট এতটাই গভীর যে, ইসরায়েলি বাহিনী অভিজাত ইউনিট ও কমান্ডোদের ব্যবহার করছে সাধারণ পায়ে হেঁটে যুদ্ধ করা সেনাদের কাজেও। অথচ এসব বিশেষায়িত ইউনিটের সদস্যদের ঐ ধরনের দায়িত্ব পালনের প্রশিক্ষণ নেই, ফলে তাদের ব্যবহার কার্যকর হচ্ছে না।

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, অনেক সেনা দাবি করেছেন, তাদের সঙ্গে এক বছরের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে দরকষাকষি করছে কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ টানা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সামরিক অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।

এই সংকটই সেনাবাহিনীর চাকরির মেয়াদ বাড়ানো ও নিয়োগ দীর্ঘায়িত করার কারণ হয়ে উঠেছে। ফলে বাড়ছে ক্লান্তি ও ক্ষোভ, যা সেনাদের মনোবলেও প্রভাব ফেলছে।

পর্যাপ্ত সেনা না থাকায় সামরিকভাবে ভূখণ্ডে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা ইসরায়েলের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। কারণ, নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় এলাকায় বিস্তৃত অংশ জুড়ে সেনা মোতায়েন করার মতো জনবল তাদের হাতে নেই।

ইসরায়েলি সামরিক রেডিওর তথ্য অনুযায়ী, গাজায় চলমান যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৮৯০ জনের বেশি ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি। চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, প্রায় ২০ হাজার সেনা এখন পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা যুদ্ধ-পরবর্তী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

সর্বশেষ