মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

এটি ইসরায়েলের জন্য কঠিন দিন, বললেন নেতানিয়াহু

নেতানিয়াহু বলেন, আমার স্ত্রী এবং আমি হৃদয়ের গভীর থেকে নিহত সেনাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।
ইসরায়েল
এটি ইসরায়েলের জন্য কঠিন দিন, বললেন নেতানিয়াহু। ছবি : আল জাজিরা

উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় তিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা অবশেষে স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন অফিসার।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রেডিও জানিয়েছে, নিহত তিন সেনা ও আহত অফিসার সবাই ৪০১তম সাঁজোয়া ব্রিগেডের সদস্য। তারা জবালিয়ার উত্তরে একটি মারকাভা ট্যাংকের ভেতরে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।

এর আগে, সোমবার সকালে বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানায়, গাজা উপত্যকার চারটি স্থানে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সমন্বিত অভিযানে তিন সেনা নিহত ও আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

খবরে বলা হয়, খান ইউনুস, জবালিয়া, তুফাহ ও শুজাইয়া এই চার এলাকায় একই সময়ে এসব হামলা চালানো হয়।

সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ক্যান জানায়, সোমবার দুপুরে জবালিয়ায় একটি মারকাভা ট্যাংকের ভেতরে প্রবল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় ট্যাংকে। দীর্ঘ সময় ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চললেও, ওই সময় পর্যন্ত সেনারা ট্যাংকের ভেতরেই আটকে ছিলেন।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে চলতি বছরের মার্চে ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে নিহত সেনার সংখ্যা দাঁড়াল ৪৩ জন। আর ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের নিহত সেনার সংখ্যা ৮৯৩।

নেতানিয়াহুর শোক আর বিরোধীদের তোপ

ঘটনার পর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটা ইসরায়েলের জন্য এক কঠিন দিন। গোটা জাতি সশ্রদ্ধভাবে সাঁজোয়া ব্রিগেডের যোদ্ধাদের স্মরণ করছে।’

তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী এবং আমি হৃদয়ের গভীর থেকে নিহত সেনাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।

তবে নেতানিয়াহুর এই মন্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিরোধীরা। ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের নেতা ইয়াইর গোলান সরাসরি নেতানিয়াহুর দিকেই আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, এই সেনারা এক অন্তহীন রাজনৈতিক যুদ্ধের বলি। নেতানিয়াহু আবারও দেখালেন, নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখাই তাঁর অগ্রাধিকার, এমনকি সে জন্য সেনাদের রক্তকেও উপেক্ষা করতে পারেন।

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ টেলিভিশনে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমাদের বাস্তবতা কতটা করুণ যেখানে একদিকে গাজায় সেনা নিহত হওয়ার খবর আসছে, আর ঠিক সেই সময়ে ধর্মীয় গোষ্ঠী হারেদিদের জন্য সেনা সেবা থেকে অব্যাহতি নিয়ে আলোচনা চলছে।

সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম আরও বলেছে, নেতানিয়াহু যেন দ্বিমুখী চরিত্রের অধিকারী—এক হাতে সেনা নিহতের শোকবার্তা দেন, অন্য হাতে রাজনৈতিক স্বার্থে হারেদিদের জন্য আইন পরিবর্তনে কাজ করেন, যেন ক্ষমতায় আরও কিছুদিন টিকে থাকা যায়।

israil

‘নিরাপত্তা কেবল চুক্তির মাধ্যমেই’

গাজার মধ্যাঞ্চল থেকে ছোড়া দুটি রকেট ভূপাতিত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এর মধ্যে অন্তত একটি রকেট গাজার সীমান্তবর্তী বেইরি বসতিতে গিয়ে আঘাত হানে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।

গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর টানা আগ্রাসনের মধ্যেও প্রতিরোধ যোদ্ধারা এখনো রকেট ছোড়ার সক্ষমতা ধরে রেখেছে।

চলতি মাসের ৬ জুলাই হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড জানায়, তারা ১১৪ মিলিমিটার ব্যাসের ‘রুজুম’ রকেট দিয়ে নিরিম ও আইন হাশলিশিত এই দুটি ইসরায়েলি বসতিতে হামলা চালিয়েছে। সে সময় ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম জানায়, গাজার কাছের নিরিম এলাকায় একটি রকেট গিয়ে পড়ে সেই জায়গায়, যেখানে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলায় ধ্বংস হওয়া ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণের কাজ চলছিল।

এই ধরনের রকেট হামলার সামরিক প্রভাব সীমিত হলেও এর রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট—এমনটাই মনে করেন সামরিক বিশ্লেষক কর্নেল হাতেম কারিম আল ফালাহি। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, যতদিন গাজা নিরাপদ নয়, ততদিন গাজার চারপাশের ইসরায়েলি বসতিগুলোও নিরাপদ থাকবে না—এই বার্তাই দিচ্ছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা।

তিনি বলেন, গাজার পাশের যেসব বসতিকে ‘উন্মুক্ত এলাকা’ ঘোষণা দিয়ে মানুষকে সেখানে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এই রকেট হামলা তাদের জন্য সরাসরি বার্তা। যতক্ষণ যুদ্ধ চলবে এবং রাজনৈতিক কোনো সমাধান বাস্তবায়িত না হবে, ততক্ষণ সেখানে প্রকৃত নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না।

সর্বশেষ