আঞ্চলিক উত্তেজনা ও বিদেশি হস্তক্ষেপের আশঙ্কার মধ্যেই মুখ খুলেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের ‘সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে’ পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের অভিযোগ, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালিয়ে অস্থিরতা তৈরির পেছনেও নয়াদিল্লির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে দাবি তাদের।
গত মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে এক বিস্ফোরণে ১৬ সেনাসদস্য নিহত হন এবং আহত হন ২০ জনের বেশি। আহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সাধারণ নাগরিক। হামলার দায় স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। ঘটনার পর ইসলামাবাদ সরাসরি ভারতকে দায়ী করে জানিয়েছে, দেশে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ও নাশকতার পেছনে নয়াদিল্লির অর্থ ও সমর্থন রয়েছে।
এ ঘটনার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার পুরোনো উত্তেজনা। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ভাষ্য, দেশের ভেতরে সশস্ত্র তৎপরতা উসকে দিতে ভারতের ‘সক্রিয় ভূমিকা’ রয়েছে।
আল জাজিরাকে দেওয়া এই বিশেষ সাক্ষাৎকারে আইএসপিআরের মহাপরিচালক জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী সাম্প্রতিক কয়েকটি স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সামরিক ও গণমাধ্যমে সম্প্রতি ‘খারিজি’ শব্দটি ঘন ঘন ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মূলত রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এই শব্দটি বিশেষ করে টিটিপিকে বোঝাতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে তিনি ‘ফিতনা হিন্দুস্তান’ শব্দটি ব্যবহার করেন। এ শব্দটি দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, পাকিস্তানে ভারতের সমর্থনে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কথা, যারা দেশের ভেতরে অস্থিরতা ছড়াতে সক্রিয়। তিনি জানান, বেলুচিস্তান প্রদেশে এসব গোষ্ঠীর তৎপরতা বেশি।
অন্যদিকে, ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গোটা অঞ্চলে যখন উত্তেজনা চরমে, তখন পাকিস্তান জানিয়ে দিয়েছে—তারা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে তেহরানের পাশে রয়েছে। ইসলামাবাদ মনে করে, কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর হামলা শুধু সেই দেশের জন্য নয়, বরং গোটা অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
একযোগে সতর্কবার্তা দিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। তারা জানিয়েছে, দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি সুরক্ষিত এবং এটি নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি বরদাশত করা হবে না। সেনাবাহিনী হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েলসহ কোনো পক্ষ যদি এ কর্মসূচিকে টার্গেট করার চেষ্টা করে,তবে তাৎক্ষণিক ও কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
সামরিক বাহিনীর এই বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও বর্তমান আঞ্চলিক ভারসাম্য নিয়ে তাদের আত্মবিশ্বাসই প্রকাশ পেয়েছে।
সাক্ষাৎকারে চৌধুরী বলেন, ‘পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসী তৎপরতায় ভারতের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে।’ এ বিষয়ে তিনি বেশ কিছু তথ্য–প্রমাণও উপস্থাপন করেন।
তিনি আরও জানান, পাকিস্তানের ভেতরেই কিছু ‘শত্রুপন্থী ঘাঁটি’ সক্রিয় রয়েছে—যেগুলোর গতিবিধি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে সেনাবাহিনী। দেশটির নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থে এসব বিষয়কে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া, ইরান–ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন তিনি। বলেন, আঞ্চলিক উত্তেজনার মুহূর্তে পাকিস্তান নিজের নিরাপত্তা, ন্যায় ও স্থিতিশীলতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
চৌধুরী আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা অক্ষুন্ন ও অপ্রতিরোধ্য। এখানে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
তিনি জানান, যেকোনো সম্ভাব্য পরিস্থিতি মাথায় রেখেই পাকিস্তানের সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনী কে পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে দ্রুত ও কার্যকর জবাব দেওয়া যায়।
সূত্র: আল জাজিরা