মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

রোহিঙ্গা শিবিরে রহস্যময় জ্বরের প্রাদুর্ভাব, আতঙ্কে লাখো শরণার্থী

রোহিঙ্গা শিবিরে রহস্যময় জ্বরের প্রাদুর্ভাব, আতঙ্কে লাখো শরণার্থী
রোহিঙ্গা শিবিরে রহস্যময় জ্বরের প্রাদুর্ভাব, আতঙ্কে লাখো শরণার্থী। ছবি : আরাকান নিউজ এজেন্সি

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে অজানা এক জ্বর। গত মে মাসের শুরুর দিকে যে জ্বর মাঝেমধ্যে দেখা যাচ্ছিল, এখন তা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকেরা এখনো রোগটির নির্ভুল পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। ফলে এটি ‘রহস্যময় জ্বর’ নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে শিবিরজুড়ে।

অসুস্থ হয়ে পড়ছেন হাজারো শরণার্থী। উপসর্গগুলো ডেঙ্গু কিংবা চিকুনগুনিয়ার মতো হলেও পরীক্ষার ফলাফল সেসব রোগকে নিশ্চিত করছে না।

রোগটির প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা, তীব্র গাঁটে ব্যথা, শরীরে কাঁপুনি, ত্বকে র‌্যাশ, ক্ষুধামন্দা, চোখের সাদা অংশে হলদে রঙ দেখা যাওয়া, এমনকি হাঁটতে অক্ষম হওয়া পর্যন্ত।

স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, রোগটি সাধারণ ভাইরাস জ্বরের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক এবং কষ্টদায়ক। একজন রোগীর সংস্পর্শে আসার পর অল্প সময়েই অন্যরাও আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।

একজন রোহিঙ্গা নারী ‘আরাকান নিউজ এজেন্সি’কে বলেন,
‘ডাক্তাররা শুধু প্যারাসিটামল দেয়, বলে ডেঙ্গু হতে পারে। কিন্তু ওষুধ খেয়ে কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আমরা দিন দিন আরও অসুস্থ হচ্ছি।’

একজন পিতা জানালেন,
‘আমার ছেলে পাঁচ দিন ধরে বিছানায়। শরীর কাঁপে, কিছু খেতে পারে না। কোনো ওষুধে কাজ হচ্ছে না। আমরা খুব আতঙ্কে আছি।’

চিকিৎসার অভাবে আরও জটিলতা

শিবিরের চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই সীমিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের শুধু প্যারাসিটামল দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফলাফল নেগেটিভ আসছে।

অন্যদিকে, অনেকেই শিবিরের বাইরে থেকে উচ্চমূল্যের অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাচ্ছেন। কেউ কেউ সাময়িকভাবে উপসর্গ থেকে কিছুটা স্বস্তি পেলেও অধিকাংশ শরণার্থীর সেই সামর্থ্য নেই। এতে চিকিৎসা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।

চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতির অভাব

রোগ নির্ণয়ে কোনো অগ্রগতি না থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন,
‘এই জ্বর সাধারণ নয়। আক্রান্তরা কয়েকদিন হাঁটতেও পারেন না। দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’

শিবিরে উপযুক্ত চিকিৎসক, পরীক্ষাগার, ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্সের ঘাটতি পুরনো সমস্যা হলেও এবার পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

রোগটি সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে শিশু ও বয়স্কদের ওপর। বহু পরিবারে একাধিক সদস্য একসঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

জরুরি আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান

এই সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন রোহিঙ্গা নেতারা, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

তাঁদের দাবি—শিবিরে দ্রুত মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন, পর্যাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক ও ওষুধ সরবরাহ, মোবাইল ল্যাবরেটরি ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের দল পাঠানো এবং অতিরিক্ত চিকিৎসক নিয়োগ জরুরি।

জাতিসংঘ, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলছেন,
‘অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতা ও দারিদ্র্য পরিস্থিতিতে আমরা একা এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারব না। জরুরি সহায়তা না এলে বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ নেবে।’

সর্বশেষ