মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, পশ্চিম তীরে লকডাউন

ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান ঘিরে পূর্ব জেরুজালেমে উত্তেজনা, করোনার পর প্রথমবার বন্ধ পবিত্র মসজিদটি

পবিত্র আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের প্রবেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। করোনাভাইরাস মহামারির পর এই প্রথমবারের মতো মসজিদটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হলো।

শুক্রবার ফজরের নামাজের পরপরই ইসরায়েলি সেনারা মসজিদ চত্বরে অভিযান চালিয়ে মুসল্লিদের বের করে দেয় এবং মসজিদের সব দরজা বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুধু ইসলামিক ওয়াকফ ফাউন্ডেশনের কর্মীদের মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে মুসলমানরা গতকাল জুমার নামাজ আদায় করতে পারেননি।

জেরুজালেমের ইসলামিক ওয়াকফের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক আওন বাজবাজ বলেন, ইসরায়েল চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আল-আকসার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

তিনি বলেন, তারা বলছে, নিরাপত্তার কারণে মসজিদ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শুধু ওয়াকফ কর্মীরাই প্রবেশ করতে পারছে। কবে খুলে দেওয়া হবে, তা কেউ জানে না। এই অনিশ্চয়তা আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করছে।

বাজবাজ অভিযোগ করেন, বহু বছর ধরে ইসরায়েল আল-আকসা মসজিদের নিয়ন্ত্রণ ভাগ করে নেওয়ার একটি পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁর ভাষায়, সময় ও স্থানভিত্তিক বিভাজনের ৯৯ শতাংশই ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন দিনে সেনারা চত্বরে অভিযান চালায়, আর পর্যটকরা অবাধে ঘোরাফেরা করে।

তিনি আরও জানান, মসজিদের পূর্ব অংশ ‘বাবুর রাহমা’র নাম পরিবর্তন করে সেটিকে বসতি স্থাপনকারীদের একটি উপাসনালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। গতকাল সেখানে বসতি স্থাপনকারীরা নৃত্য করেছে এবং ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

আল-আকসা চত্বরে সাম্প্রতিক দ্রুত পরিবর্তন নিয়ে বাজবাজ বলেন, গত ছয়-সাত মাসে এত দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে যে, গণমাধ্যম তা পুরোপুরি তুলে ধরতেও পারেনি। আমি আমার স্ত্রীকে বলেছি, হয়তো অচিরেই নামাজ পড়ার জন্যও অ্যাপের মাধ্যমে সময় বুকিং দিতে হবে।

এদিকে, শুক্রবার সকালেই পশ্চিম তীরজুড়ে কড়া নিরাপত্তা জারি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ওয়াফা জানিয়েছে, বেশ কিছু সামরিক চেকপয়েন্ট ও প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক শহর ও গ্রামের মধ্যে সংযোগকারী সড়কগুলো মাটি ফেলে আটকে দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে পশ্চিম তীর থেকে বাইরের জগতে যাতায়াতের একমাত্র পথ এলেনবি ব্রিজ (কিং হুসেইন ব্রিজ নামেও পরিচিত) বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

আল-আকসা মসজিদ, যেটি মুসলমানদের কাছে ‘প্রথম কিবলা’ নামে পরিচিত, দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলি দখল ও ধর্মীয় উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। চুক্তি অনুযায়ী মসজিদটি মুসলমানদের নামাজ আদায়ের স্থান হলেও ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী দলগুলো প্রায়ই সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেখানে অভিযান চালায়।

ফিলিস্তিনিরা মনে করেন, এসব অভিযান ও নিয়ন্ত্রণ জোরদারের মাধ্যমে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে দখলকৃত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল-আকসার মতো ধর্মীয় স্থানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও চলাচলের অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন বলেই মনে করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

তারা এই নিষেধাজ্ঞাকে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ ও যৌথ শাস্তির কৌশল হিসেবে উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা