ব্রিটেনের সাবেক লেবার পার্টি নেতা ও সংসদ সদস্য জেরেমি করবিন স্পষ্ট ভাষায় জানাচ্ছেন, ইসরায়েলের গাজা আগ্রাসনে ব্রিটেনের ভূমিকা কী ছিল, তা জানার অধিকার ব্রিটিশ জনগণের রয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে করবিন লিখেছেন, ইরাক যুদ্ধ নিয়ে যেমন ‘চিলকট তদন্ত’ হয়েছিল, তেমনই এখন প্রয়োজন গাজা যুদ্ধ নিয়ে একটি স্বাধীন, পূর্ণাঙ্গ ও প্রকাশ্য তদন্ত। এতে স্পষ্টভাবে জানা যাবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজা আগ্রাসনে ব্রিটেন কীভাবে, কোনভাবে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে।
এই উদ্দেশ্যে তিনি পার্লামেন্টে একটি প্রাইভেট বিল উত্থাপন করছেন। বিলটির মাধ্যমে সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি দিক বিশ্লেষণ করে সত্য প্রকাশের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চান করবিন—
- ব্রিটেন ইসরায়েলকে কী ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করেছে?
- সেই অস্ত্রগুলো গাজায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে ব্যবহার হয়েছে কি না?
- ব্রিটিশ সরকার কোনো আইনি পরামর্শ পেয়েছিল কি না?
- সাইপ্রাসে অবস্থিত ব্রিটিশ ‘আক্রোটি’ ঘাঁটি দিয়ে কি অস্ত্র পাঠানো হয়েছে?
- ব্রিটেন ও ইসরায়েলের মধ্যে কী ধরনের গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে?
ইরাকের ভুল গাজায় আবারও ঘটছে
করবিন স্মরণ করিয়ে দেন, তিনি লেবার পার্টির নেতা থাকা অবস্থায় ‘চিলকট তদন্ত’ লেবারকে ইরাক যুদ্ধের জন্য দায়ী করে। তখন তিনি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবার ও নিহত সেনাদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
আজ, গাজায় সেই একই নিষ্ঠুর ইতিহাস যেন নতুনভাবে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে আর ব্রিটেন আবারও সেই সহায়তাকারী ভূমিকায়।
২০ মাসে ৫৪ হাজারের বেশি মৃত্যু, তবু থামেনি ব্রিটেনের অস্ত্র সরবরাহ
ইসরায়েলের হামলায় গত ২০ মাসে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৪ হাজার মানুষ। অথচ এই দীর্ঘ সময়েও ব্রিটেন থেকে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়নি। এমনকি ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে লেবার পার্টি যে পরিমাণ অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স অনুমোদন করেছে, তা কনজারভেটিভ সরকারের তুলনায়ও বেশি।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অস্ত্র রপ্তানি আংশিকভাবে স্থগিতের ঘোষণা এলেও বাস্তবে সরবরাহ থামেনি।
একজন যুদ্ধাপরাধীর হাতে কেন অস্ত্র?
করবিন তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন যে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, তার হাতে কীভাবে ব্রিটেন অস্ত্র তুলে দিতে পারে?
তিনি বলেন, ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি থেকে অস্ত্র সরবরাহ বা গোয়েন্দা তথ্য পাঠানো সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সরকার কেবল নীরবতা, ফাঁকি আর দায়িত্ব এড়ানোর আশ্রয় নিয়েছে।
গাজার বিভীষিকা—যা গোটা বিশ্ব দেখেছে
করবিন তাঁর লেখায় গাজার বিভীষিকাময় পরিস্থিতির বর্ণনা দেন, পরিবারের পর পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মৃতদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, চিকিৎসা চলছে অবচেতন অবস্থায়, গুঁড়িয়ে গেছে হাসপাতাল, ঘরবাড়ি।
এই ভয়াবহতা শুধু গাজাবাসীদের নয়—পৃথিবীর সমস্ত বিবেকবান মানুষের চোখে পানি এনে দিয়েছে।
প্রবন্ধের শেষদিকে করবিন উচ্চারণ করেন এক জোরালো বার্তা— গাজায় যে অপরাধ চলছে, তা কখনোই চাপা পড়ে থাকবে না। ব্রিটিশ জনগণ প্রশ্ন করবেই। এখন দেখার বিষয়, সরকার কি সত্যের পাশে দাঁড়াবে, নাকি আবার চোখ বন্ধ করে রাখবে?
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান