মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ফ্রান্সে ‘তুফানুল আকসা’ নিয়ে পোস্ট করায় ইমামকে কারাদণ্ড ও জরিমানা

ফ্রান্সে ‘তুফানুল আকসা’ নিয়ে পোস্ট করায় ইমামকে কারাদণ্ড ও জরিমানা
ফ্রান্সে ‘তুফানুল আকসা’ নিয়ে পোস্ট করায় ইমামকে কারাদণ্ড ও জরিমানা

ফ্রান্সের মার্সেই শহরের এক আদালত ‘সন্ত্রাসবাদে প্রশংসা’ করার অভিযোগে এক ইমামকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দুই হাজার ইউরো জরিমানা করেছে। বৃহস্পতিবার ফরাসি পত্রিকা লো মোঁদ-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত ইমাম ইসমাইল বিন জেলালি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ একটি ভিডিও পুনঃপ্রকাশ করেন। ভিডিওটিতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক’ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। আদালত এটিকে সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন হিসেবেই দেখেছে।

আদালতের রায়ে আরও বলা হয়েছে, ইমামের নাগরিক অধিকার আগামী পাঁচ বছরের জন্য স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি তাঁর নাম সন্ত্রাসবিরোধী অপরাধীদের জাতীয় নিবন্ধনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তবে আরেকটি অভিযোগ থেকে ইমামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেই অভিযোগে বলা হয়েছিল, তিনি একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন যেখানে এক ইসরায়েলি সেনাকে ফিলিস্তিনিকে নির্যাতন করতে দেখা যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল— দায়েশ (আইএস) এর তুলনায় এরা যেন গির্জার শিশুর মতো। তবে এই বক্তব্যকে আদালত অপরাধ হিসেবে গণ্য করেনি।

রাষ্ট্রপক্ষ চেয়েছিল, ইমামকে ছয় মাসের জন্য এক্স ব্যবহার থেকে বিরত রাখা হোক এবং মার্সেইয়ের ব্লুই মসজিদ থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হোক। তবে বিচারক এই দাবি নাকচ করে দেন।

রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইমাম ইসমাইল। তিনি জানান, আবার জুমার খুতবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। নিজের পোস্ট নিয়ে তিনি বলেন, রিটুইট করা মানেই সমর্থন নয়। আমি ওই বক্তব্যের পক্ষে কিছু বলিনি।

তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কিছু বললেই আমাদের সন্ত্রাসবাদী বা ইহুদিবিদ্বেষী বলে দাগানো হয়। কিন্তু আমরা চুপ করে থাকব না।

২০২৪ সালের গ্রীষ্মে ইমাম ও তাঁর মসজিদ প্রশাসনের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। মার্সেই পুলিশ মসজিদটি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়, যা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানাঁর নির্দেশে আসে। পরে ইমাম ঘোষণা দেন, তিনি সাময়িকভাবে খুতবা বন্ধ রাখবেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ডিপ্লোমা অর্জনের পর পুনরায় দায়িত্বে ফিরবেন। একই সময়ে তিনি বিতর্কিত পোস্টগুলো এক্স থেকে মুছে ফেলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদ বন্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়।

লো মোঁদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমামের নাম সম্প্রতি ফ্রান্সে মুসলিম ব্রাদারহুড নিয়ে প্রকাশিত সরকারি এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে ১৩৯টি মসজিদকে ব্রাদারহুড সংশ্লিষ্ট এবং আরও ৮৬টিকে ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মসজিদ ফ্রান্সের ৫৫টি প্রশাসনিক এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে।

ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রিতাইউ সম্প্রতি ব্রাদারহুডের ‘অনুপ্রবেশ’ ঠেকাতে নতুন এক পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। তাঁর দাবি— এই গোষ্ঠী ফ্রান্সে শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় আছে। যদিও ফ্রান্সে মুসলিম ব্রাদারহুডের কোনো আনুষ্ঠানিক সংগঠন নেই, বরং এটিকে একটি ‘চিন্তাধারা’ হিসেবে দেখা হয়।

সরকার তাই সরাসরি নিষিদ্ধ না করে অর্থনৈতিকভাবে আঘাত হানার কৌশল নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে সংগঠনগুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশে অর্থ স্থানান্তর বন্ধ, এবং প্রয়োজনে বিলুপ্তির আগে সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ফ্রান্সের জাতীয় গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ফ্রাঙ্ক ফ্রিগোসি ফরাসি পত্রিকা লিবারাসিওঁ-কে বলেন,।ফ্রান্সে মুসলমানদের জন্য পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। ইউরোপে খিলাফত কায়েমের কোনো বাস্তব পরিকল্পনা আছে—এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।

আরো পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন