দক্ষিণ সিরিয়ার কুনেইত্রা ও দারা প্রদেশ সংলগ্ন অধিকৃত গোলান মালভূমি সীমান্তে ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেন এলাকা পুরোপুরি ইসরায়েলের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণাধীন।
গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনীর অনুপ্রবেশ, গোয়েন্দা নজরদারি, এবং আবাসিক এলাকায় চেকপয়েন্ট স্থাপন সীমান্তবর্তী জনপদে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। অথচ আন্তর্জাতিক মহল এই বিষয়ে নীরব।
চেকপয়েন্টের নামে সামরিক নিয়ন্ত্রণ
গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কুনেইত্রার সাইদা আল-হানৌত গ্রামে প্রায় ১৩টি সাঁজোয়া যান নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর একটি দল প্রবেশ করে। তারা আবাসিক এলাকায় টহল শেষে গোলান হাইটসের তেল আল-জালাঘ ঘাঁটিতে ফিরে যায়। একই দিন আল-মুয়াল্লাকা গ্রামের কাছে আল-দারিয়াত পাহাড়ে ইসরায়েলের আরেকটি ইউনিট কিছু সময় অবস্থান করে। যদিও সরাসরি কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
এসব স্থল অভিযানের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিমানের টানা নিম্ন-উচ্চতার উড্ডয়ন পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জনগণের হয়রানি ও আতঙ্ক
উত্তর কুনেইত্রার আইন আল-বায়দা ও জুবাতা আল-খাশাব সড়কে ইসরায়েলি বাহিনী একতরফাভাবে চেকপয়েন্ট বসিয়ে কয়েকজন স্থানীয়কে আটক করে তল্লাশি চালায়। এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট কারণ দেখানো হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব তৎপরতা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কুনেইত্রার বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-বকর বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনীর অনুপ্রবেশ এখন নিত্যদিনের ঘটনা।’ তিনি জানান, কোডনা, সাইদা আল-হানৌত, আল-রাফিদ, মানতারা ও রুওয়াইহিনা বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত সামরিক যান চলাচল ও চেকপয়েন্ট বসানো হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ইসরায়েল এরই মধ্যে জাবাল আশ শেইখে স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলেছে, যেখান থেকে দামেস্ক ও দক্ষিণ সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। কেবল কুনেইত্রা এলাকাতেই এখন অন্তত ১২টি সামরিক চেকপয়েন্ট সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
বিস্তার ও মানবিক সংকট
মানবাধিকারকর্মী ওমর আল-মাসালমা বলেন, ‘প্রতিদিনের এই সামরিক তৎপরতা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলেছে। নারী ও শিশুরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।’ তাঁর মতে, ইসরায়েল এমনভাবে আচরণ করছে যেন এই এলাকা তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড—আন্তর্জাতিক আইন বা মানবিক বিবেচনার কোনো মূল্যই যেন নেই তাদের কাছে।
তিনি বলেন, এই তৎপরতা ১৯৭৪ সালের সিরিয়া-ইসরায়েল বাহিনী বিচ্ছিন্নকরণ চুক্তিরও লঙ্ঘন, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা
আল-মাসালমা অভিযোগ করেন, ‘নাগরিকদের ক্রমাগত আবেদন ও অভিযোগ সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মহল কার্যকর কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। সিরিয়া সরকারও কেবল নিন্দা জানিয়েই দায় সারে।’ তাঁর আশঙ্কা, এই সুযোগে ইসরায়েল সীমান্তবর্তী এলাকায় সামরিক অবস্থান স্থায়ী ঘাঁটিতে রূপান্তর করছে এবং এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক চিত্র বদলে দিতে চাইছে।
দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসরায়েলি তৎপরতা এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি দখলদার কৌশলেরই অংশ। চেকপয়েন্ট বসানো, নজরদারি ও স্থানীয়দের হয়রানির মধ্য দিয়ে ইসরায়েল এখানে ‘ফ্যাক্ট অন দ্য গ্রাউন্ড’ তৈরি করতে চাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা নেওয়াই এখন সময়ের দাবি।
সূত্র: আল আরবি আল জাদিদ