প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ৭৭ বছর পার করল ইসরায়েল। শুরু থেকেই দেশটি প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর সঙ্গে ফিলিস্তিনের ভেতরে ও বাইরে একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।
প্রথম পাঁচ দশকের যুদ্ধগুলোর একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল, সেগুলো অধিকাংশ সময়ই ফিলিস্তিনের বাইরের সীমান্তে ঘটেছে। তাছাড়া ওই সময়ে যুদ্ধের খরচ ছিল মূলত সামরিক, যা অনেক সময় যুদ্ধলব্ধ সম্পদ দিয়েই পুষিয়ে নেওয়া যেত।
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ ছাড়া বাকি সবগুলোই ছিল তুলনামূলকভাবে স্বল্পমেয়াদি ও সীমিত, যেগুলোর তেমন কোনো দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক বা সামাজিক প্রভাব পড়েনি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোর যুদ্ধ যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র সামনে নিয়ে এসেছে।
১৯৭৩ সালের যুদ্ধের পর মিশর, পরে জর্ডান এবং সবশেষে আব্রাহাম চুক্তির মধ্য দিয়ে ইসরায়েল কিছু শান্তিচুক্তি করেছিল ঠিকই। কিন্তু এই চুক্তিগুলোর পরেও যুদ্ধ থেমে থাকেনি। বরং যুদ্ধগুলো এখন খণ্ড খণ্ড আকারে হলেও আরও বিস্তৃত ও বিধ্বংসী হয়েছে। কারণ, এসব সংঘর্ষ আর শুধু সীমান্তে সীমাবদ্ধ নেই, বরং সরাসরি আঘাত হানছে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে।
প্রথম লেবানন যুদ্ধ, প্রথম ইন্তিফাদা, দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধ, গাজায় একের পর এক যুদ্ধ এবং সর্বশেষ ‘তুফানুল আকসা’—সবই ইসরায়েলের ‘অভ্যন্তর’ কে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে। ফলে এসব সংঘর্ষে শুধুমাত্র জীবনহানিই ঘটছে না বরং তীব্রভাবে আঘাত হানছে দেশটির অর্থনীতি ও সমাজেও।
পশ্চিমা ধাঁচে গড়ে ওঠা ইসরায়েলি অর্থনীতিতে এসব যুদ্ধের অভিঘাত হয়ে উঠছে দিনকে দিন আরও ধ্বংসাত্মক। বাস্তবতা বলছে, ইসরায়েল এখন এমন এক সংকটে রয়েছে, যার প্রভাব শুধু সামরিকখাতেই নয় গোটা রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যেই পড়ছে।
অতিরিক্ত যুদ্ধব্যয় ও দীর্ঘমেয়াদি বোঝা
যুদ্ধ যখন ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়েছে, তখন এটা পরিষ্কার যে এই ফ্রন্টে প্রতিদিনের লড়াই সীমান্তে চলা যুদ্ধের চেয়েও বেশি ব্যয়বহুল। বহু বছর ধরে ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, যুদ্ধের পরিস্থিতি ততটা তীব্র না হলেও প্রতিদিনের অর্থনৈতিক ক্ষতি অন্তত ৫০ কোটি শেকেল। আর বর্তমান যুদ্ধে সেই খরচ আরও বহুগুণ বেড়েছে।
এই হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের সরাসরি ব্যয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ঘোষিত সামরিক ব্যয়ের প্রায় চার গুণ। কারণ, একদিকে কলকারখানা বন্ধ, শ্রমিকেরা ঘরে বসে মশা মারছে, অন্যদিকে প্রতিদিন নতুন নতুন ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা যুক্ত হচ্ছে।
অর্থনীতিবিষয়ক পত্রিকা ক্যালকেলিস্ট বলছে, জানুয়ারি মাসে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে সেনা ও রিজার্ভ সদস্যদের পেছনে। রিজার্ভ সদস্যরা এখন পর্যন্ত মোট ৪ কোটি ৯০ লাখ কর্মদিবস সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে ব্যয় এখানেই থেমে নেই। মানুষের মাঝে নিরাপত্তার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে সীমান্তজুড়ে সেনা মোতায়েন অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। নিয়মিত সেনা নিয়োগের সংকট থাকায় রিজার্ভ সদস্যদের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে, আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো অর্থনীতিকে।
ক্যালকেলিস্ট আরও জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৪০ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার, অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার সেনা নতুন করে আহত হচ্ছেন।
যুদ্ধের শুরুতে ২ লাখ ২০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে একযোগে ডেকে পাঠানো হয়। এদের একাধিকবার দীর্ঘ সময়ের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে— কেউ কেউ তিন থেকে চার দফা ডিউটি করেছেন। এর ফলে মোট রিজার্ভ কর্মদিবসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৯ মিলিয়ন, যেখানে সাধারণত এক বছরে এই সংখ্যা থাকে ২৫ লাখের মতো।
এই বিপুল সংখ্যক কর্মদিবস ইসরায়েলি অর্থনীতির ওপর রাখছে গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক একটি প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে যুদ্ধের মোট খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন শেকেল। এর মধ্যে ৪৪ বিলিয়ন শেকেল খরচ হয়েছে শুধু রিজার্ভ সেনাদের বেতন ও অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচে।
এই খরচই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় খাত। অস্ত্র বা যুদ্ধবিমান চালানোর খরচের চেয়েও বেশি। প্রতিটি রিজার্ভ সেনার জন্য মাসে গড়ে অন্তত ১৫ হাজার শেকেল ব্যয় করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, যার মধ্যে রয়েছে ভাতা ও অন্যান্য ইনসেনটিভ।
যুদ্ধের শুরুতে রিজার্ভ সেনার সংখ্যা যেভাবে ছিল, এখন তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে—প্রায় এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। যদি উত্তর বা দক্ষিণ ফ্রন্টে নতুন করে যুদ্ধ শুরু না হয়, তবে বছরের বাকি সময়ে এই সংখ্যা আর বাড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। অথচ যুদ্ধের আগের বছরগুলোতে গড় রিজার্ভ সেনা সংখ্যা ছিল মাত্র ৭ হাজার।
সেনাদের পাশাপাশি, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ইসরায়েলি এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের তৈরি ‘হিত্স-৩’ ক্ষেপণাস্ত্র। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের দাম প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ ডলার। এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়েছে ইরান ও ইয়েমেন থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিহত করতে। বিশেষ করে এপ্রিলে ও অক্টোবরে ইরান থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এবং ইয়েমেনের হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে এর ব্যবহার হয়েছে ব্যাপকভাবে।
এদিকে গাজায় যুদ্ধ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সেনাপ্রধান ইয়াল জামির যখন কয়েক হাজার সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেন, তখন বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়েই নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে।
ইসরায়েলের প্রভাবশালী অর্থনৈতিক দৈনিক দ্য মারকার–এর এক প্রাথমিক হিসাবে উঠে এসেছে, চলমান যুদ্ধ যদি আরও তিন মাস দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে এর মোট ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ২৫ বিলিয়ন শেকেল (৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এই ব্যয় কেবল সামরিক খাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ—যেখানে রিজার্ভ সেনাদের ভাতা এবং গোলাবারুদের মতো সরঞ্জামের ব্যয় মাসিক ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
অর্থনীতির হিসাবে এর অর্থ হলো— সরকারকে কয়েক সপ্তাহ আগে কষ্ট করে পাস করানো বাজেট আবার খুলতে হবে এবং ব্যয়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এর পরিণতিতে নতুন করে কর আরোপ এবং নাগরিকদের ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এর পাশাপাশি, গাজা দীর্ঘ সময় দখল করে রাখা ও সেখানকার প্রশাসনিক দায়িত্ব নেওয়ার চিন্তা ইসরায়েলি অর্থনীতির ওপর আরও বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে। এই ব্যয় পৌঁছাতে পারে আরও বহু বিলিয়ন শেকেলে।
তবে এসব আলোচনার আগে জানা জরুরি—২০২৫ সালের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যে বাজেট অনুমোদন পেয়েছে, সেটি গঠিত হয়েছে ২০২৪ সালের খরচকে ভিত্তি করে। ওই বছর প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল ১৫২ বিলিয়ন শেকেল, অর্থাৎ প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট এর চেয়ে কিছুটা কম, ১৩৮ বিলিয়ন শেকেল— প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে যুদ্ধ যদি সম্প্রসারিত হয়, তাহলে ২০২৫ সালের সামরিক ব্যয় ছাড়িয়ে যাবে ১৬০ বিলিয়ন শেকেল, যা ২০২৪ সালের তুলনায় দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
অর্থমন্ত্রী বেচালেল স্মোত্রিচ বাজেট পাস হওয়ার পর বলেছিলেন, এই বাজেট ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে শত্রু দমন করার জন্য প্রয়োজনীয় সব রিসোর্স দেবে। রিজার্ভ সেনা, ব্যবসায়ী, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও এতে গুরুত্ব পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, এই বাজেট আমাদের সেই বড় বিজয়ের চূড়ান্ত পরিণতি টেনে আনবে, যা আমরা এখন কেবল এক কদম দূরে দাঁড়িয়ে আছি।
কিন্তু দ্য মারকার-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সরকার একদিকে বাজেট অনুমোদন করেছে, আবার অন্যদিকে এমন পরিকল্পনা নিয়েছে যা সেই বাজেট কাঠামোকেই খালি খোলসে পরিণত করেছে। তাদের ব্যাখ্যা, হয় সরকার বুঝেই বাজেটকে ভেতর থেকে ফাঁপা রেখেছে, তবুও কনেসেটে তা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেছে; অথবা বাজেট তৈরির সময় ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জটিল পরিস্থিতিগুলোর কোনো বিবেচনাই তারা করেনি।
পত্রিকাটি আরও বলেছে, যুদ্ধ সম্প্রসারণ, দীর্ঘ সময় অঞ্চল দখলে রাখা এবং সংঘাতের মাত্রা তীব্রতর হলে শুধু সরাসরি ব্যয়ই বাড়বে না, এর অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক প্রভাব পড়বে। রিজার্ভ সেনা ডাকার কারণে শ্রমবাজারে ঘাটতি তৈরি হবে, উৎপাদন কমবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মন্থর হয়ে পড়বে।
এছাড়া অনির্দিষ্টকাল ধরে চলা যুদ্ধ ইসরায়েলে বিনিয়োগ ঝুঁকি বাড়াবে, শেকেলের মান কমবে এবং অর্থের মূল্য হ্রাস পাবে। আর এত উচ্চ নিরাপত্তা ব্যয়ের ফলে সরকারের বেসামরিক খাতে বিনিয়োগ, যেমন—অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য—এসব খাতের জন্য বরাদ্দ কমে যেতে পারে।
সারকথা, গাজায় যুদ্ধ শুধু একটি সামরিক অভিযান নয়, এটি ইসরায়েলের অর্থনীতির জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি বোঝা হয়ে দাঁড়াতে চলেছে।
রিজার্ভ সেনা তলবে বিপুল ব্যয়, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ‘অর্থনৈতিক বিপর্যয়’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধানের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মেহরান বুরুজনফার সম্প্রতি রেডিও ১০৩এফএম-এ এক সাক্ষাৎকারে রিজার্ভ সেনাদের ব্যাপকহারে ডাকার আর্থিক ব্যয় নিয়ে আশঙ্কাজনক চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, স্বনির্ভর পেশাজীবীদের জন্য এটা হতে পারে এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্যোগ।
তার ভাষায়, আমাদের আগে বুঝতে হবে—ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মূল ভরকেন্দ্র রিজার্ভ ফোর্স। নিয়মিত সেনাবাহিনী থাকলেও, বাস্তবে যুদ্ধের সময় আমাদের ভরসা রাখতে হয় রিজার্ভ সৈন্যদের ওপর। কিন্তু এবার যুদ্ধটা অনেক দীর্ঘ হয়েছে, এবং রিজার্ভ সেনাদের ওপর এমন চাপ আর কখনো পড়েনি।
তিনি বলেন, এই যুদ্ধে শুধু রিজার্ভ সৈন্যরাই নয়, লড়াইয়ের দায়ভারও মূলত একটি তুলনামূলক ছোট জনগোষ্ঠীর কাঁধে। এর ফলে রিজার্ভ বাহিনীর ওপর চাপ আরও বেড়ে গেছে। আর সেই সঙ্গে বেড়েছে অর্থনৈতিক ব্যয় যা ‘বিশাল’ বললেও কম বলা হয়।
এই বিশাল ব্যয়ের হিসেব তুলে ধরে বুরুজনফার বলেন, ধরা যাক, প্রতিদিন একজন রিজার্ভ সেনার প্রত্যক্ষ খরচ এক হাজার শেকেল। যদি এক দিনে ৬০ হাজার সেনাকে তলব করা হয়, তাহলে শুধু বেতনের খাতেই খরচ পড়ে যায় ৬০ মিলিয়ন শেকেল।
তবে এটুকু মোট ব্যয়ের খুবই ছোট অংশ। গোলাবারুদ, প্রশিক্ষণ, পরিবহন, খাওয়া-দাওয়া, থাকার ব্যবস্থা—সব মিলিয়ে ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তার ভাষায়, সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে উৎপাদনহীনতা। কারণ, এই মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতি পূর্ণ গতিতে চলছে। এমন অবস্থায় কর্মক্ষম মানুষজনকে কাজ থেকে সরিয়ে নেওয়া মানে সরাসরি উৎপাদনে ধ্বস নামানো। যতদিন এটা চলতে থাকবে, ততই বাড়বে ক্ষতির পরিমাণ।
বুরুজনফার বলেন, যদি শুধু বেতন খরচ হিসেব করি, তা ৬০ মিলিয়ন শেকেল। আর বাকি খরচসহ পুরোটা দাঁড়াতে পারে ১০০ মিলিয়ন শেকেলের মতো। এই হার ধরে চললে এক মাসে সেটা পৌঁছাতে পারে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়নে।
সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খাচ্ছে ক্ষুদ্র ও স্বনির্ভর ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, যদি কারও ছোট একটা ব্যবসা থাকে, আর সেটি পুরোপুরি তার ওপর নির্ভর করে, তবে তাকে যদি দুই-তিন মাসের জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়, সে শুধু এই কয়েক মাসের আয় হারাবে না, বরং পুরো ব্যবসাটাই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। একবার এই ঝড়ের মধ্যে পড়ে গেলে অনেকেই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।
বুরুজনফার বলেন, অনেক সময় আমরা সিদ্ধান্ত নিই, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে ভুল করি। এখন আমরা এক সংকটাপন্ন সময় পার করছি। প্রায় দুই বছর ধরে এই যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধ শেষ করার সময় এসেছে। কীভাবে শেষ করব, সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু এটুকু বুঝতে হবে—আমরা আর একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে যেতে পারি না। এর খরচ বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই।
তিনি মনে করিয়ে দেন, এখনো মানসিক ক্ষতির হিসাব ধরা হয়নি। যে সৈনিকেরা নিহত হয়েছেন বা আহত হয়েছেন, তাদের অভিজ্ঞতা কতটা ভয়াবহ, সেটা আমরা অনেক সময় হিসেবেই রাখি না। এখন দরকার কঠিন ও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া। গন্তব্য ঠিক করতে হবে, দ্রুত এই যুদ্ধের ইতি টানতে হবে।
বুরুজনফার যে আশঙ্কা তুলে ধরেছেন, তা প্রতিফলিত হয়েছে ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে। ব্যাংকটি আগামী দুই বছরে ইসরায়েলের প্রবৃদ্ধি এবং জাতীয় উৎপাদন কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।
তবে আরও বড় আশঙ্কা হলো—বিদেশি বিনিয়োগের হ্রাস। নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে। ইসরায়েলের প্রভাবশালী অর্থনীতিবিষয়ক দৈনিক গ্লোবস লিখেছে, এই যুদ্ধের প্রভাবে ইসরায়েল অন্তত এক দশক অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যেতে পারে।
সূত্র: আল জাজিরা