মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

সিরিয়ায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, জাতীয় উল্লাসে ফেটে পড়ল জনতা

সিরিয়ায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, জাতীয় উল্লাসে ফেটে পড়ল জনতা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে স্বস্তি ও আনন্দের বন্যা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গেই সিরিয়ার সরকার সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানায়, আর সাধারণ মানুষ নেমে আসে রাস্তায়। উৎসব-উদযাপন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী থেকে প্রদেশে, শহর থেকে শহরে। এই সিদ্ধান্তকে সিরিয়ার জনগণ দেখছেন এক নতুন ভোরের সূচনা হিসেবে।

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আশ-শাইবানি এক বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাহসী সিদ্ধান্তকে আমরা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। এটি আমাদের জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক মোড়।

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প এমন এক শান্তিচুক্তির পথে হাঁটছেন, যা তাকে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখবে। তিনি একই সঙ্গে মার্কিন স্বার্থ এবং সিরিয়ার স্থিতিশীলতাকে এগিয়ে নিচ্ছেন। তার পূর্বসূরিদের যে উদাসীনতা ছিল, তার বিপরীতে এই সিদ্ধান্ত একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।

অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াসার বারনিয়া মার্কিন প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জগুলো বুঝে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি সিরিয়ার পক্ষে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অংশ নেওয়া সৌদি আরব, কাতার, তুরস্কসহ অন্যান্য মিত্রদের ভূমিকাও স্মরণ করেন।

তার মতে, এই পদক্ষেপ শুধু অর্থনৈতিক স্বস্তি আনবে না, বরং শরণার্থীদের ফেরার পথ প্রশস্ত করবে এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক সেবাগুলোর উন্নয়নে সহায়ক হবে। তিনি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখনই সিরিয়ায় বিনিয়োগের সেরা সময়। আমরা দেশকে একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিচ্ছি, যাতে সিরিয়ার জনগণ আবার উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে। এতদিন তারা যেভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল, তা আর চলবে না। এখন তাদের সময় এসেছে জেগে ওঠার।

তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের আহ্বান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিকও এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলে আখ্যায়িত করে বলেন, সিরিয়ার জনগণের সামনে এখন দীর্ঘদিনের সংঘাত পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ এসেছে।

সিরিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয় জানায়, প্রেসিডেন্ট আহমদ আশ -শারা শিগগিরই সৌদি আরবে ট্রাম্পের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন।

ঘোষণার পরপরই রাজধানী দামেস্ক থেকে শুরু করে হালব, হিমস, হামা, তর্তুস ও লাতাকিয়া পর্যন্ত শহরজুড়ে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। জাতীয় পতাকা হাতে তারা স্লোগানে মুখরিত করে তোলে চত্বর ও সড়ক। চলে মিছিল, ও স্লোগান।

লাতাকিয়ার এক বাসিন্দা বলেন, এই সিদ্ধান্ত আমাদের শুধু আনন্দই দেয়নি, বরং আমাদের মধ্যে নতুন করে আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছে। এখন আমরা আবার স্বপ্ন দেখতে পারি।

এদিকে জানা গেছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শিগগিরই তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন, যেখানে তিনি সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আশ-শাইবানির সঙ্গে বৈঠক করবেন।

উল্লেখ্য, এর আগেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও কানাডা সিরিয়ার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞা মূলত ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কার্যকর ছিল।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা