চেনাব নদীর পানি পাকিস্তানে আর প্রবাহিত হচ্ছে না—ভারতের এমন সিদ্ধান্তে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে দিল্লি-ইসলামাবাদ সম্পর্কের পরিমণ্ডলে। জম্মু ও কাশ্মিরে সাম্প্রতিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক সিন্ধু নদী পানি চুক্তির কার্যকারিতা স্থগিত রাখার অংশ হিসেবে চেনাব নদীর উপর নির্মিত বাগলিহার বাঁধ থেকে পাকিস্তানে পানি ছেড়ে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। একই সঙ্গে কিশানগঙ্গা বাঁধ থেকে ঝিলম নদীর পানির প্রবাহও থামিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা কখনো আগ্রাসনের সূচনা করব না। তবে ভারত যদি সংঘাতের পথ বেছে নেয়, তাহলে জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা এক ফোঁটা পানিও ছাড়ব না।’
পাকিস্তান অভিযোগ করছে, ভারত একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করে সিন্ধু চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে, বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোর উপর। অপরদিকে ভারতের বক্তব্য, চুক্তির সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান পানি বণ্টনে অতিরিক্ত সুবিধা পাচ্ছে।
২২ এপ্রিল ভারত-দখলকৃত কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে বন্দুকধারীদের হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন। এই হামলার পরপরই নয়াদিল্লি সিন্ধু চুক্তির বাস্তবায়ন স্থগিত করে এবং দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানি কূটনীতিকদের সাত দিনের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতের অভিযোগ নাকচ করে দেয়, ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকদের সংখ্যা কমিয়ে আনে এবং জানিয়ে দেয়—সিন্ধু চুক্তির বাইরে কোনো ধরনের পানি হস্তক্ষেপ ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র শামিল হবে। একই সঙ্গে ভারতীয় পণ্যের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেয় এবং ভারতের বিমানগুলোকে পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই আজ সোমবার ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। একদিনের সফরে তিনি পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন। যদিও পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি, তবে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত রেজা আমিরি মোকাদ্দম জানিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়ার উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে।
সপ্তাহের শেষদিকে আরাকচির দিল্লি সফরের পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক এ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই সফরদ্বয় পরিকল্পিত কি না, সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানায়নি কোনো পক্ষ।
সূত্র: আল জাজিরা