সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি বার্তা সংস্থা ‘ডব্লিউএএম’-এর বরাতে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল হামাদ সাইফ আল শামসি জানান, ‘আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর কাছে সামরিক সরঞ্জাম পাচারের একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে।’
তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় অস্ত্র ব্যবসা ও মধ্যস্থতার সঙ্গে জড়িত একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা যথাযথ অনুমতি ছাড়াই এসব সরঞ্জাম পাচারের চেষ্টা করছিল।
অন্যদিকে, সুদানের তথ্যমন্ত্রী খালিদ আল-আইসার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘সুনা’কে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আবুধাবি সরকার মূলত তাদের অপরাধ ঢাকতে সুদান সরকারকে দোষারোপ করছে। এটি আসলে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর কাছে অস্ত্র সরবরাহের দায় এড়ানোর জন্য একটি নাটক।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘আসলে আবুধাবি সরাসরি RSF-এর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। সুদান সরকারের কাছে এমন প্রমাণ রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেইসব প্রমাণে দেখা যায়, আমিরাতভিত্তিক কিছু কোম্পানি RSF-কে অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।’
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও RSF-এর মধ্যে চলা সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, এই মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি হতে পারে।
সুদানের তথ্যমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, আমিরাত সরকার তাদের রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি গণমাধ্যম ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দায়ের করা মামলাকে প্রভাবিত করতে চাচ্ছে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত জানিয়েছে আগামী ৫ মে তারা সুদান বনাম আমিরাত মামলার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। মামলায় অভিযোগ তোলা হয়েছে, আমিরাত RSF-এর মাধ্যমে দারফুর অঞ্চলে ‘মাসালিত’ জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যায় জড়িত।
চলতি বছরের মার্চে, সুদান আদালতে অভিযোগ দায়ের করে জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৯৪৮ সালের ‘গণহত্যা প্রতিরোধ ও দণ্ডবিধি চুক্তি’ লঙ্ঘন করেছে। মামলায় আমিরাতকে গণহত্যা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং RSF-এর মাধ্যমে বেসামরিকদের ওপর হামলা বন্ধে আদেশ প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এপ্রিলের ১০ তারিখে, আদালতের শুনানিতে সুদানের আইনমন্ত্রী মোয়াওয়া উসমান বলেন, ‘RSF-কে আমিরাতের অস্ত্র ও লজিস্টিক সহায়তা সরবরাহই দারফুরে সংঘটিত ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও নিপীড়নের অন্যতম কারণ।’
অন্যদিকে ইউএই এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেছে, ‘সুদান এখনও পর্যন্ত কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি, এবং তাদের মামলা আইনগতভাবে দুর্বল ও ভিত্তিহীন।’
সূত্র: আনাদোলু