পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন, তাদের গোয়েন্দা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ভারত যে কোনো সময় পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালাতে পারে। এ ধরনের সম্ভাব্য উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক আরব দেশ দুই পক্ষকে সংযম বজায় রাখার এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ মেটানোর আহ্বান জানিয়েছে।
বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে পাকিস্তানি তথ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ভারতের এমন আগ্রাসী মনোভাব পুরো অঞ্চলকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
এদিকে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এক উচ্চপদস্থ ভারতীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার এক গোপন বৈঠকে সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন যে কোনো হামলার পাল্টা জবাব দিতে।
তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক ডার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান কখনোই প্রথমে আক্রমণে যাবে না।
উত্তেজনার পেছনের প্রেক্ষাপট
২২ এপ্রিল ভারত-দখলকৃত কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন এবং আরও অনেকে আহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোকেই দায়ী করে। তবে ইসলামাবাদ এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং ভারতকে ‘প্রচারণাভিত্তিক অপপ্রচারে’ লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনে।
উল্লেখ্য, ঘটনার সময় মার্কিন সহ-সভাপতি জেডি ভ্যান্স পরিবারসহ ভারত সফরে ছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
হামলার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পারস্পরিকভাবে ভিসা ব্যবস্থা বাতিল এবং দূতাবাস কার্যক্রম সীমিত করে দেওয়া হয়।
আকাশপথেও নিষেধাজ্ঞা
বৈরী পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় ভারত সরকার ৩০ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত পাকিস্তানি বিমান সংস্থাগুলোর জন্য আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করে। এর আগে পাকিস্তানও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর ওপর।
পানি নিয়ে নতুন অভিযোগ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ভারতের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে উত্তেজনা বাড়ানোর অভিযোগ তুলে বলেন, ভারত ‘পানি’কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি জানান, সিন্ধু নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ভারত এমন পদক্ষেপ নিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিওর সঙ্গে এক ফোনালাপে তিনি ভারতকে দায়িত্বশীল আচরণের জন্য চাপ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র তামি ব্রুস জানান, রুবিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে পেহেলগাম হামলার নিন্দা জানান এবং তদন্তে সহযোগিতা করতে পাকিস্তানকে উৎসাহিত করেন। একইসঙ্গে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে সংকট নিরসনে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহ দেন।
আরব বিশ্বও উদ্বিগ্ন
সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, জর্ডান, ওমান এবং লিবিয়া—এই ছয়টি আরব দেশ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত বিস্তারমান উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা ভারত ও পাকিস্তানকে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা