দক্ষিণ দামেস্কের সাহনায়া শহরের আশরাফিয়্যাহ এলাকায় চরম আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের দিন। কয়েক দিন আগে পাশের শহর জারমানায় শুরু হওয়া অস্থিরতার রেশ গিয়ে লেগেছে এখানেও। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘রাস্তাঘাট একেবারে ফাঁকা। কী ঘটছে, কেউ কিছু জানে না। মাঝে মাঝে শুধু পায়ের শব্দ শোনা যায়, কিন্তু জানালার কাছেও যাওয়ার সাহস হয় না—গুলির ভয়ে।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আশরাফিয়্যাহ সাহনায়ায় কারফিউ জারি করেছে জননিরাপত্তা বিভাগ। কবে নাগাদ এটি তুলে নেওয়া হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
দামেস্কে সরকারি বার্তা সংস্থা সানাকে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, ‘আমাদের বাহিনী এলাকায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। এই গোষ্ঠীগুলো বেসামরিক মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার জন্য আশরাফিয়্যাহ সাহনায়াকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল।’
নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা, নিহত ১১
ভোরে সশস্ত্র একদল ব্যক্তি সাহনায়ায় হামলা চালায়। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, এই হামলায় জননিরাপত্তা বিভাগের ১১ সদস্য নিহত হন। নিহতদের মধ্যে সাহনায়া ও জারমানার দ্রুজ সম্প্রদায়ের কেউ ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দ্রুজ নেতার সতর্কবার্তা
‘আহরার জাবালুল আরব’ সংগঠনের নেতা শায়খ সুলায়মান আবদুল বাকী বলেন, ‘আমরা সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা সংঘাত এড়াতে চেয়েছে। তবে কিছু উগ্র ব্যক্তি— যারা সদ্য প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে— সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে।’
তিনি সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এই সহিংসতার দায়ভার এবং বেসামরিকদের নিরাপত্তার সম্পূর্ণ দায় সরকারকেই নিতে হবে।’
উত্তেজনার সূত্রপাত জারমানায়। ২৯ এপ্রিল রাতে একজন দ্রুজ সম্প্রদায়ের ব্যক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত কথিত একটি অডিও বার্তায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননার অভিযোগ ওঠে। এরপরই সেখানে সহিংসতা শুরু হয়, যা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে।
বিদ্যুৎ ও পানির তীব্র সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত। মানুষ ট্যাংকার থেকে পানি সংগ্রহ করছে। ফ্রিজ, ফ্রিজার অচল হয়ে গেছে। একমাত্র ভরসা মোবাইল ইন্টারনেট, যার মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছড়ানো খবর জানা যাচ্ছে।
এখন অনেক পরিবার মিলে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ কিছু ঘরে একসঙ্গে অবস্থান করছে। সাহনায়ায় প্রবেশের প্রধান পথ দারয়া কিংবা মাজ্জাহ–জাদিদাহ আরতূয সড়ক। বাকি রাস্তাগুলো বন্ধ অথবা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, সংঘাত সুয়েইদা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এলাকায় স্থিতিশীলতা ফেরাতে সুয়েইদার গভর্নর মুস্তফা আল-বাকুর স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন।
ইসরায়েলি হস্তক্ষেপ ও মোয়াফাক তারিফের তৎপরতা
সানা জানায়, গতরাতে আশরাফিয়্যাহ সাহনায়ার এক চৌকিতে হামলায় তিনজন নিরাপত্তা সদস্য আহত হন। পাশাপাশি, কিছু সশস্ত্র ব্যক্তি কৃষিজমিতে আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষের যানবাহন ও নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িতে গুলি চালায়। এতে ছয়জন নিহত হন এবং আরও অনেকে আহত হন।
সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মোট ১১ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ‘সিরিয়ার সরকারকে আমরা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি— দ্রুজ সম্প্রদায় যেন কোনোভাবেই হামলার শিকার না হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদেরই।’
তাঁদের বক্তব্যের পাশাপাশি, ইসরায়েলের দ্রুজ সম্প্রদায়ের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা মোয়াফাক তারিফ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, গোয়েন্দা বিভাগ ও সেনাবাহিনী সিরিয়ার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। তাদের দাবি, এক সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্রুজদের লক্ষ্য করে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সতর্কবার্তা দিতে ইসরায়েল ড্রোন হামলা চালায়, যদিও এতে কেউ হতাহত হয়নি।
সূত্র: সিরিয়া টিভি