ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ফের চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। পরস্পরের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় অভিযোগ, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পদক্ষেপ, এমনকি জলচুক্তি স্থগিতের ইঙ্গিত—সব মিলিয়ে যুদ্ধের আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন হয়ে উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ফের চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। পরস্পরের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় অভিযোগ, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পদক্ষেপ, এমনকি জলচুক্তি স্থগিতের ইঙ্গিত—সব মিলিয়ে যুদ্ধের আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন হয়ে উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
কাশ্মীরের ভারতদখলকৃত অঞ্চলে সম্প্রতি এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন, আহত হন আরও অনেকে। ভারত দাবি করেছে, হামলাকারীরা পাকিস্তান থেকে এসেছিল। এরপর নয়াদিল্লি ‘সিন্ধু নদ জলচুক্তি’ স্থগিতের হুমকি দেয় এবং পাকিস্তানি কূটনীতিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এর জবাবে পাকিস্তান ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইসলামাবাদে ভারতীয় কূটনীতিকদের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে এবং জানায়, জলচুক্তিতে হস্তক্ষেপকে তারা ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে দেখবে। একই সঙ্গে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং আকাশসীমাও বন্ধ করে দেয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
যুক্তরাষ্ট্র
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আশা করছেন ভারত ও পাকিস্তান ‘কোনো না কোনোভাবে’ বিরোধের সমাধানে পৌঁছাবে। তার ভাষায়, দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে এই বিরোধ নতুন নয়, আগের মতোই এটি মিটে যাবে।’ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা উভয় দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে এবং একটি ‘দায়িত্বশীল সমাধান’-এর পক্ষে রয়েছে।
চীন
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা প্রতিবেশী দুই দেশের কাছ থেকে সংযম প্রত্যাশা করে এবং আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর আহ্বান জানায়। কাশ্মীর হামলার বিষয়ে চীন ‘ন্যায়সঙ্গত ও নিরপেক্ষ তদন্ত’-এর দাবি জানিয়েছে।
রাশিয়া
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রুদেঙ্কো বলেছেন, মস্কো চায় ভারত ও পাকিস্তান শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ মেটাক। তিনি জানান, রাশিয়া দুই দেশকেই সংযত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে এবং গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজার পক্ষে রয়েছে।
তুরস্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের যোগাযোগ দপ্তর জানিয়েছে, পাকিস্তানে তুরস্ক অস্ত্রবাহী কোনো বিমান পাঠায়নি—এই সংক্রান্ত খবর ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’। প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘আমরা চাই এই উত্তেজনা দ্রুত প্রশমিত হোক, যেন এটি আরও ভয়াবহ রূপ না নেয়।’
ইরান
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ পোস্ট করে জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে তেহরান প্রস্তুত।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘ ভারত ও পাকিস্তানকে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে এবং সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে বলেছে। সংস্থাটির মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেন, ‘আমরা উভয় দেশকে অনুরোধ করছি, যেন তারা সংযম বজায় রাখে এবং পরিস্থিতি যেন আরও অবনতির দিকে না যায়, তা নিশ্চিত করে।’
কাতার
কাতার বলেছে, তারা ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমনের সব প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং কাতারের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান।
মিসর
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদুল আতি ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদা আলাদা ফোনালাপ করেছেন। তিনি বলেন, এই সংকটকালে সংযম দেখানো জরুরি এবং উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
সৌদি আরব
একজন উচ্চপদস্থ সৌদি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘সৌদি আরব দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশই সৌদির মিত্র। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা ফোনালাপ করেছেন এবং চলমান সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
সূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা
