মোগাদিশু থেকে আঙ্কারা—দুই রাজধানীর মধ্যে সম্প্রতি যে কূটনৈতিক সরবতা দেখা যাচ্ছে, তা ঘিরে পূর্ব আফ্রিকায় বাড়ছে উদ্বেগ। সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মাহমুদ বর্তমানে এক সরকারি সফরে তুরস্কে রয়েছেন। যদিও সফরটি কূটনৈতিক বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তবে এর আড়ালে ভিন্ন উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের ধারণা, সম্প্রতি স্বাক্ষরিত বিতর্কিত তেল চুক্তির মতো এবার ইউরেনিয়াম ক্ষেত্রেও সোমালিয়ার মূল্যবান সম্পদ তুরস্কের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মধ্য সোমালিয়ার মুদুগ অঞ্চলে প্রায় ৫,০০০ টন ইউরেনিয়াম অক্সাইড (U3O8) রয়েছে, যা বর্তমানে আঙ্কারার গভীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। তেল চুক্তির সময় যে একতরফা ও স্বচ্ছতার অভাব ছিল, ইউরেনিয়াম নিয়ে আলোচনায়ও তেমন চিত্রই পুনরায় দেখার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
তেল চুক্তি: অংশীদারিত্ব না নিছক লুটপাট?
সম্প্রতি সই হওয়া তুরস্ক-সোমালিয়া তেল চুক্তিকে অনেকেই বলছেন ‘ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ চুক্তি’। এতে তুরস্ক সোমালিয়ার মাটি থেকে খনিজ তেল উত্তোলনের অধিকার পেলেও, স্থানীয় বাজারে তা স্বল্প দামে সরবরাহ করার কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। বরং, ‘খরচ পুনরুদ্ধার’-এর অজুহাতে তুরস্ক ইচ্ছেমতো অর্থ দাবি করতে পারবে, কোনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বা নিরীক্ষার তোয়াক্কা না করেই।
এমন এক সময়ে এই চুক্তি হয়েছে, যখন সোমালিয়ার সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত। ফলে, বিশ্লেষকরা একে ‘অর্থনৈতিক আত্মঘাত’ বলেই অভিহিত করছেন।
এই চুক্তিগুলোর ফলাফল বুঝতে হলে মোগাদিশুর বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের দিকেই তাকানো যথেষ্ট। তুরস্ক-চালিত কোম্পানিগুলো সেখানে বিপুল মুনাফা করছে, অথচ স্থানীয় জনগণের জীবনে কোনো বাস্তব উন্নয়ন চোখে পড়ছে না। বরং, জনগণকে বোঝানো হচ্ছে যেন এসব তুরস্কের ‘উপহার’।
বিশ্লেষকদের মতে, এইসব তথাকথিত বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তি আসলে দুর্বল রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সোমালিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের একটি সুচারু পরিকল্পিত লুটপাট ছাড়া কিছুই নয়।
সূত্র: CN