মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের বিশেষ  সাক্ষাৎকার ‘সিরিয়া দখল করতে চাইছে না তুরস্ক’

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের বিশেষ  সাক্ষাৎকার

সম্প্রতি আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় তুরস্কের হস্তক্ষেপের ব্যাপারে নানান ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। তৈরি হয়েছে নানান বিতর্ক-বিশ্লেষণ। সেসব ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ( ইংরেজি) মুখোমুখি হয়েছেন তুরষ্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। ভিডিও থেকে বিশেষ এই সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন—আবু বকর সিদ্দিক। 

আল জাজিরা: আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে—মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তুরস্ক সিরিয়ায় একটি তথাকথিত ‘অবন্ধুসুলভ দখল’ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি দাবি করেছেন, তুরস্ক হাজার বছর ধরেই এটা চাচ্ছিল। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন ? তুরস্ক কি সত্যিই সিরিয়ায় ‘অবন্ধুসুলভ দখল’ কার্যক্রম পরিচালনা করছে ?

হাকান ফিদান: প্রথমেই আমি বলব—আমরা একে দখল বলে মনে করি না। কারণ সিরিয়ার জনগণের সাথে যা ঘটছে, তাকে দখল হিসেবে উপস্থাপন করাটা গুরুতর ভুল হবে। আর যদি এখানে কোনো দখল হয়েই থাকে, তবে সেটাও হচ্ছে সিরিয়ার জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতেই।

আল জাজিরা: তাহলে কি বলা যায়, শেষ পর্যন্ত তুরস্কই সিরিয়ায় শাসক শক্তি হবে ?

হাকান ফিদান: আমি মনে করি, এটা এমন একটি বিষয়—যা আমরা একেবারেই চাই না। কারণ আমাদের সাথে যা ঘটেছে, তা থেকে আমরা বড় শিক্ষা নিয়েছি। আধিপত্যের সংস্কৃতিই আমাদেরকে ধ্বংস করেছে। তাই তুরস্কের আধিপত্য নয়, ইরানের আধিপত্য নয়, আরবদের আধিপত্য নয়; বরং সহযোগিতাই হওয়া মূলনীতি উচিত। সুতরাং আমরা এখন আর এরকম ভাবছি না। সিরিয়ার জনগণের সঙ্গে আমাদের সংহতিকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়—যেন আমরা সিরিয়াকে শাসন করছি। আমি মনে করি, এটা ভুল হবে।

আল জাজিরা: যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় আমেরিকার সিনিয়র কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে, তুরস্ক হয়তো সিরিয়ার SDF (সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস) বা YPG (পিপলস ডিফেন্স ইউনিট)—যারা মূলত সিরিয়ার কুর্দি বাহিনী—তাদের পরাজিত করতে সীমান্তের বাইরে বড় একটি অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটা কি সঠিক ? তুরস্ক কি সত্যিই এমন কিছু করতে চায় ?

হাকান ফিদান: আপনি জানেন, PKK (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি) বা তাদের সিরিয়ান শাখা YPG তুরস্কের জন্য বিরাট এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে YPG তাদের উপস্থিতি এবং আধিপত্য বজায় রাখতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা পশ্চিমাদের সাহায্যে নিজেদেরকে ISIS-এর বিরুদ্ধে লড়াই করা একটি গ্রুপ হিসেবে উপস্থাপন করছে। তবে এটা তাদের প্রকৃত পরিচিতির একটি ভুল উপস্থাপনা। তারা মূলত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেই সেখানে কাজ করছে। যারা ISIS-এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তাদের প্রতিটি গ্রুপকে যদি আমরা চিহ্নিত করি, তবে অন্যান্য দেশ এবং অঞ্চলের গোষ্ঠীগুলোকে নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। প্রতিটি অঞ্চলের বিভিন্ন গোষ্ঠী আলাদা আলাদা কারণে ISIS-এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। সুতরাং, YPG হল PKK-এর একটি শাখা এবং তাদের দলে তুরস্ক, ইরান, ইরাক এবং ইউরোপীয় কিছু দেশের লোকজনও রয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী  হিসেবে তালিকাভুক্ত। তবে তারা (YPG) যে PKK-এর শাখা হিসেবে কাজ করছে—আমাদের পশ্চিমা বন্ধুদের চোখে তা পড়েনি। ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক।

আল জাজিরা:  ২০১৬ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশ কার্টার কংগ্রেসে স্বীকার করেছিলেন যে, YPG এবং PKK এর মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। তার মতে, YPG PKK এর সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। অবশ্যই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র PKK কে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে। তাহলে আপনি কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করবেন যে তারা SDF—যাদের মূল হলো YPG—তাদেরকে সমর্থন করা বন্ধ করুক ?

হাকান ফিদান: আমরা বেশ কিছু সময় ধরেই তাদের কাছে এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে আসছি। আপনি কি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পেয়েছেন? আমি মনে করি, এটা সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়ে। তখন আমাদেরকে তারা যে ব্যাখ্যা দিয়েছিল তা হলো—এ ব্যাপারে অচিরেই একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আল জাজিরা: তাহলে কি এ প্রতিশ্রুতি সত্যি নয়!

হাকান ফিদান: না, এটা সত্যি নয়। এটা আসলে একটা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর থেকে আমরা আবারও মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি যে—কীভাবে এই বিষয়টি সমাধান করা যায়। কারণ এটি স্পষ্টভাবে তুরস্কের জাতীয় স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলছে।

তবে আমরা চাই না, এই অঞ্চলের কোনো নির্দিষ্ট ভারসাম্য বিঘ্নিত হোক। কিন্তু আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা এবং সুরক্ষিত রাখাটাও জরুরি। তাই আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

আল জাজিরা: এর মানে কি এই যে, তুরস্ক একটি বড়সড় আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ? তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তুরস্কের কমান্ডো বাহিনী নাকি কুবানির কাছে ট্যাংক এবং ভারী কামান জড়ো করছে। সত্যিই কি তুরস্ক একটি বড় আক্রমণ চালাতে পারে ?

হাকান ফিদান: আমি এটা পরিষ্কার করে বলি। দেখুন, এখন দামেস্কে একটি নতুন প্রশাসন রয়েছে। এটা এখন তাদের উদ্বেগ। তাই আমি মনে করি, তারা যদি এই বিষয়টি সঠিকভাবে সমাধান করে, তাহলে আমাদের আর হস্তক্ষেপ করার কোনো কারণই থাকবে না।

আল জাজিরা: তাদের কী করতে হবে? পুরো সিরিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে?

হাকান ফিদান: হুম, অবশ্যই।

আল জাজিরা: তুরস্কের দৃষ্টিকোণ থেকে কি সিরিয়ায় একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বা কুর্দি সংগঠন থাকতে পারে? নাকি এটা তুরস্কের জন্য স্বাভাবিকভাবেই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে?

হাকান ফিদান: আমি মনে করি, সিরিয়ার জনগণের পক্ষে কথা বলা কিংবা তাদের প্রতিনিধিত্ব করা আমার পক্ষে ঠিক হবে না। এটা সিরিয়ার জনগণেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। তবে আমি যা বলতে পারি তা হলো, তুরস্কের ইচ্ছা ও নীতি অনুযায়ী আমরা চাই—কুর্দি, আরব এবং তুর্কমেন জনগণ তাদের আসল স্থান ত্যাগ না করুক। তারা যেন কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হয় এবং তাদেরকে তাদের জন্মস্থান ও গ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বাধ্য না করা হয়। কিন্তু সংক্ষেপে বললে, কুর্দিরা—বিশেষ করে বেসামরিক কুর্দিরা—তাদের জায়গাতেই বসবাস করতে পারা উচিত।

আল জাজিরা: যদি সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার বা দামেস্কের দীর্ঘমেয়াদি কর্তৃপক্ষ সিরিয়ার কুর্দিদের নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে যে সব অঞ্চল আছে সেগুলো পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়, তাহলে কি তুরস্কের সৈন্যরা সিরিয়া ছেড়ে চলে যাবে?

হাকান ফিদান: আপনি জানেন, সিরিয়ায় তুরস্কের উপস্থিতির দুটি প্রধান লক্ষ্য ছিল। একটি হলো, তুরস্কে আরও বড় আকারে শরণার্থী প্রবাহ রোধ করা। কারণ, এখনও বিরোধী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষ বাস করছে। আর দ্বিতীয়টি ছিল সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, যা এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা দেখতে পারব এই দুটি প্রধান উদ্বেগ দূর হয়ে গেছে, তখন আমাদের সিরিয়ায় থাকার আর কোনো কারণ থাকবে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি, পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবেই নেওয়া হচ্ছে।

আল জাজিরা: তাহলে কি আপনি মনে করেন যে পরিস্থিতি সঠিকভাবেই এগোচ্ছে ?

হাকান ফিদান: প্রাথমিকভাবে আমি বলব, হ্যাঁ। তবে আপনি জানেন, এটা এখন একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। ইতোমধ্যে দুই সপ্তাহ কেটে গেছে। তাই তাদেরকে কিছুটা সময় দিতে হবে। এটা দেখতে যে, কাজটা তারা কীভাবে সমাধান করে।

আল জাজিরা: এই ব্যাপারে তুরস্ক সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারকে কীভাবে দেখে? আপনারা কি তাদেরকে সিরিয়ার বৈধ কর্তৃপক্ষ এবং সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেন?

হাকান ফিদান: আমরা বর্তমান প্রশাসনকে তুরস্ক এবং আন্তর্জাতিক আলোচকদের জন্য বৈধ অংশীদার হিসেবে স্বীকার করি। এ কারণে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছি। আমরা আমাদের দূতাবাস পুনরায় খুলে দিয়েছি এবং আমাদের দূতাবাসগুলোকে সেখানকার স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছি।

আল জাজিরা: আমরা শুনেছি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ—যেমন উরসুলা ফন ডার লেইয়েন বলছেন যে, তারা নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আপনি কি মনে করেন, তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত ছিল ? আপনি কি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে এই বার্তা পেয়েছেন যে তারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে ?

হাকান ফিদান: এটা স্রেফ একটা বৈঠক ছিল। তবে আমি মনে করি, শেষমেশ তারা এটা করবে। কারণ, এই প্রোগ্রামের ঠিক আগে, আমরা ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ম্যাডাম ফন ডার লেইয়েনকে পেয়েছিলাম। তিনি তুরস্ক সফর করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে তার একটি ভালো বৈঠক হয়েছে। যে বার্তাটি আমরা পেয়েছি তা হলো, যদি দামেস্কের প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে তারা নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিতে প্রস্তুত। এটা আমি মনে করি। কারণ তারা এই মৌলিক বাস্তবতাটি স্বীকার করে যে, নিষেধাজ্ঞা এবং উন্নয়ন ও শরণার্থী প্রত্যাবর্তন একসঙ্গে চলতে পারে না। যে কারণে আপনাকে নিষেধাজ্ঞাগুলো সরিয়ে দিতে হবে, যাতে নতুন সরকার উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। জনগণের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে পদক্ষেপ নিতে পারে। পাশাপাশি এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যেখানে শরণার্থীরা পুনরায় ফিরে আসতে পারবে।

আল জাজিরা: এটা করার জন্য তো দামেস্কের কর্তৃপক্ষকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। আপনি কি মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এটা করা উচিত ? তারা কি এখন দামেস্কের কর্তৃপক্ষকে বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিবে ?

হাকান ফিদান: আপনি জানেন, এখানে দুই ধরনের কার্যক্রমের সংজ্ঞা রয়েছে। একটি হলো আইনি সংজ্ঞা, অন্যটি হলো বাস্তবিক পদক্ষেপ। এখন আমরা বাস্তবিক পদক্ষেপের কথা বলছি। আপনি জানেন, দামেস্কের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ এবং তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আমরা দেখছি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরও কিছু দেশ—তারাও দামেস্কের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

আল জাজিরা: HTS (হাইয়াত তাহরির আশ-শাম)—যারা বর্তমানে কার্যত সিরিয়ার শাসনকদল— তুরস্কের সন্ত্রাসী তালিকায় রয়েছে। আপনি কি মনে করেন, তাদের নাম এই তালিকা থেকে সরানোর সময় এসেছে?

হাকান ফিদান: আমি মনে করি, জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সকল সম্প্রদায়ের জন্য তাদের নাম সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সরানোর সময় এসেছে।

আল জাজিরা: তাহলে কি তুরস্ক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করবে ?

হাকান ফিদান: আমি বলব, না। আমরা স্বতন্ত্র একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করব। কারণ, আমরা ইতোপূর্বে যা করেছি তা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তাই আমি মনে করি, সাম্প্রতিক উন্নয়নগুলোর আলোকে আমরা আরেকটি সিদ্ধান্ত নিতেই পারি।

আল জাজিরা: আপনি সিরিয়ার শরণার্থীদের কথা বলছিলেন। তাদের কি এখন তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে?

হাকান ফিদান: না, আমরা আপাতত তাদেরকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছি না। আমরা আশা করি, তারা যদি নতুন পরিবেশ বিচার করে স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদে ফিরে যেতে চায়, তবে তাদের ফিরে যাওয়াকে স্বাগত জানানো হবে।

আল জাজিরা: আপনি কি মনে করেন পরিবেশটি সেই দিকেই এগোচ্ছে?

হাকান ফিদান: পরিসংখ্যানগুলো বর্তমানে চলমান প্রবণতাই নির্দেশ করছে। এখন যদি আমরা বর্তমান পরিসংখ্যান দেখি—যারা ফিরে যাচ্ছেন, তাদের সংখ্যা আসলে ধীরগতিতে বাড়ছে। তাই আমি মনে করি, যত বেশি স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, তত বেশি মানুষই ফিরে যাবে শেষ পর্যন্ত। 

আল জাজিরা: আপনি বলেছেন, দামেস্কের নতুন কর্তৃপক্ষের সাথে আপনি সরাসরি যোগাযোগ করেছেন। HTS ইস্যুতে তাদের সম্পর্কে আপনার ধারণা কী? যখন আমরা পশ্চিমা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনতে পাই, তারা আল কায়েদা এবং অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনের  সাথে HTS-এর পূর্ববর্তী সংযোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আপনি কি এ কথা বিশ্বাস করেন যে,  HTS তাদের সেই সংযোগগুলো ছিন্ন করেছে? 

হাকান ফিদান: হ্যাঁ, আমি মনে করি। কারণ আপনি জানেন, এই পদে (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) আসার আগে আমি আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ছিলাম দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে। এবং ইদলিব আমাদের সীমান্ত শহরের পাশেই ছিল। তাই আমরা সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসী সংযুক্ত কার্যক্রমগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। আমি মনে করি, আল কায়েদা, দায়েশ এবং অন্যান্য সংগঠনগুলোর থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার জন্য HTS অনেক বড় পদক্ষেপ নিয়েছে।

আল জাজিরা: আপনি কি মনে করেন, সিরিয়ায় শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সিরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠিত হবে? নাকি এই মুহূর্তে সেখানকার বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বাড়বে ?

হাকান ফিদান: আশা করি আমরা এমনটা দেখতে পাব না। কারণ অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ হোক—এমনটা আমরা চাইও না। আর এ কারণেই, আমরা সব বিরোধী গোষ্ঠীকে একত্রিত হতে এবং একটি একক সরকার গঠন করার জন্য গঠনমূলক পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ, সিরিয়ার মানুষের জরুরি প্রয়োজনগুলো পূরণে আর কোনোভাবেই বিলম্ব করা যাবে না। শরণার্থীদের সিরিয়ায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তারপর কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যাও রয়েছে। দুঃখজনকভাবে, সেখানকার ব্যুরোক্রেসি এবং জনসেবা এখন ভেঙে গেছে। তাই সেগুলোকে পুনঃস্থাপন করতে হবে। এরপর মৌলিক সেবা—যেমন স্বাস্থ্য, পরিবহন, খাদ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ইত্যাদি মানুষের কাছে সরবরাহ করতে হবে, যাতে তারা পুনরায় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।

আল জাজিরা: খুবই চমৎকার পরামর্শ। আপনি গত ১৩ ডিসেম্বর NTV চ্যানেলে বলেছিলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা করা দরকার ছিল তা হলো—রাশিয়ানদের ‘সমীকরণে’ প্রবেশ না করা। আপনি আরও ব্যাখ্যা করেছিলেন—‘ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন। আমরা দোহায় রুশ এবং ইরানিদের সঙ্গে একত্রিত হয়েছিলাম এবং কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। যদি তারা আসাদের শাসন টিকিয়ে রাখতে কিছু করত, তাহলে যু্দ্ধ আরও দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী হতো।’ আমরা কি এটা থেকে বুঝতে পারি যে, আসলে আপনারাই রাশিয়া ও ইরানকে মানিয়েছেন, যেন তারা বাশার আল আসাদের শাসনব্যবস্থা টেকানোর চেষ্টা না করে ?

হাকান ফিদান: অবশ্যই, আমরা তাদের সাথে আলোচনা করেছি। আমরা তাদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছি। কারণ, আমি আগেই বলেছি, আমরা আমাদের নিকট অতীত থেকে বড় বড় শিক্ষা গ্রহণ করেছি।

আল জাজিরা: আপনারা এটা কীভাবে করেছিলেন ? তাদের মানিয়েছিলেন কীভাবে ? আমি জানতে চাচ্ছি, আপনারা তাদের কী অফার করেছিলেন? তারা কি কোনো গ্যারান্টি গ্রহণ করেছিল? আসাদ শাসন ব্যবস্থা বাঁচানোর চেষ্টা না করার বিনিময়ে তারা কী চেয়েছিল?

হাকান ফিদান: আমরা তাদের সাথে খোলামেলা এবং স্পষ্ট আলোচনা করেছি। আমরা প্রতিটি বিষয় বৈঠক টেবিলে উপস্থাপন করেছি এবং একে একে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছি। আপনি জানেন, রাশিয়া-ইরান সিরিয়ার পরিস্থিতি অনেক দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছিল এবং তারা ঠিক জানত, কিভাবে আসাদের শাসনব্যবস্থা ‘ভঙ্গুর’ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। তারা পুরনো শাসন ব্যবস্থা, আসাদের শাসনব্যবস্থা—এই সমস্যাগুলোর সাথে খুব পরিচিত। তাই আমি মনে করি, এক পর্যায়ে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল, যে আমাদের বার্তাগুলো সঠিকই।

আল জাজিরা: তারা কি কোনো গ্যারান্টি পেয়েছিল যে, আসাদের শাসনব্যবস্থা পতনের পর সেখানে তাদের উপস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে?

হাকান ফিদান: আমি সিরিয়ার জনগণ এবং সিরিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে কথা বলতে পারি না। তাই আমি তাদের কোনো গ্যারান্টিও দিতে পারি না।

আল জাজিরা: আগে থেকেই তুরস্ক সিরিয়ার বিদ্রোহীদের  পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিল তবে ? 

হাকান ফিদান: মোটেও না।

আল জাজিরা: তাহলে কি আপনারা ঘটনাগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলছিলেন?

হাকান ফিদান: আমরা অনেক দিন ধরেই জানতাম যে, তাদের (HTS) এমন কিছু করার ইচ্ছা ছিল। এ পরিস্থিতিতে আমাদের উদ্বেগের কারণ ছিলো দুটি। সিরিয়ায় আরও বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার ফলে বৃহত্তর অভিবাসন প্রবাহ এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম বৃদ্ধি। আমরা গত দুই বা তিন বছর ধরে জানতাম যে, অঞ্চলটি খুব দুর্বল । উত্তর থেকে কোনো অপ্রত্যাশিত সামরিক আক্রমণ বিদ্রোহীদের কিছু সাফল্য এনে দেবে ঠিক। তবে এমন কোনো গ্যারান্টি ছিল না যে, ইরান-রাশিয়া ভারী অস্ত্র ব্যবহার করবে।  বিশেষ করে, বেসামরিক নাগরিকদের উপর মুহুর্মুহু বোমা ফেলার মাধ্যমে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করবে। এটাই আমাদের ধারণা ছিল। তবে তারা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন আমাদের কাজ ছিল এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিশ্চিত করা—যেন এটা মসৃণভাবে চলে। এ কারণেই আমাদের মনে হয়েছিল যে, কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং প্রচেষ্টা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে।

আল জাজিরা: আসাদ শাসন ব্যবস্থার পতন কি এই অঞ্চলে তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধি করেছে ?  বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিরিয়ায় এখন তুরস্ক হলো মূল খেলোয়াড়। আপনি কি এটার সাথে একমত?

হাকান ফিদান: আমি বলব, সিরিয়ার বিজয় অবশ্যই তুরস্কের দায়িত্ব বৃদ্ধি করেছে। কারণ আপনি জানেন, একটা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদেরকে সেরা চেষ্টাটাই করতে হবে। বিশেষ করে নতুন সরকারের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বর্তমানে তাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাদের কোনো আর্তনৈতিক ‘প্রণোদনা’  নেই। কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থাও নেই। এমনকি বিমানবন্দরগুলোও কাজ করছে না। সুতরাং নতুন সরকারকে দেশ পুনর্গঠন করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

আল জাজিরা: এতে কি তবে তুরস্কের প্রভাব  বৃদ্ধি হচ্ছে না ? কারণ যেমনটা আমরা এই দিনগুলোতে দেখছি—অনেক আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব আঙ্কারায় এসে তুরস্কের সাথে আলোচনা করছে (হয়তো সমন্বয় করতে)। কারণ, তারা এখন তুরস্ককেই সিরিয়ার প্রধান ’অভিভাবক’ হিসেবে দেখছে।

হাকান ফিদান: আমরা এই প্রভাবটি সিরিয়ার জনগণকে আরও অধিক পরিমাণে সহযোগিতা করার জন্য ব্যবহার করতে চাই। এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা বিষয়টি দেখছি। কারণ আমরা চাই না—আঞ্চলিক দেশগুলো এ ধারণা করুক যে, তুরস্ক সিরিয়া শাসন করছে কোনোভাবে। সুতরাং আমরা আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সাথে এক হয়ে কাজ করতে চাই। আমরা সেই ভুলটি পুনরাবৃত্তি করতে চাই না—যা কিছু দেশ এই অঞ্চলে করেছে। কারণ প্রথমত, এটি সিরিয়ার জনগণের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ হবে। এবং দ্বিতীয়ত, কোনো একক দেশ আসলে সিরিয়ার সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। সুতরাং আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।

আল জাজিরা: আপনারা কার সাথে কাজ করছেন? নাকি তুরস্ক, ইরান, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রই এখন প্রধান দেশ—যারা একসাথে মিলে ভবিষ্যতের জন্য একটি সমাধান খুঁজে বের করবে?

হাকান ফিদান: আমি মনে করি, বর্তমানে সিরিয়ার উন্নয়নমূলক বিষয় এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা—এই বিষয়গুলো সমাধান করতে শুরুতে ইরাক, জর্ডান, মিসর, সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে কাজ করতে হবে।

আল জাজিরা: এটা কি সম্ভব যে সিরিয়ায় একটি নতুন ব্যবস্থা তৈরি হবে যা এইসব আলাদা আলাদা পক্ষের সবাইকে খুশি রাখতে পারবে? মানে ইরান, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া—এদের প্রত্যেকেরই স্বার্থ আলাদা। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন ভিন্ন। এইসব পক্ষের মধ্যে কোনো ধরনের উত্তেজনার সৃষ্টি না করেই একটি নতুন সিরিয়া তৈরি হওয়া কি আদৌও সম্ভব?

হাকান ফিদান: কিছু উত্তেজনা তো অবশ্যই থাকবে। কারণ সবাইকে খুশি করা এবং সবার দাবি পূরণ করা—এটা প্রায় অসম্ভব কাজ। তবে আমাদের উচিত আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সম্প্রদায় হিসেবে মূলনীতিগুলো দেখা। যে মূলনীতিগুলো আমরা নতুন সরকার থেকে প্রত্যাশা করছি, সেগুলো হলো: 

প্রথমত, আমরা চাই না তারা সন্ত্রাসী গ্রুপ, বিশেষ করে ISIS এবং PKK-এর সাথে মিশে যাক। 

দ্বিতীয়ত, আমরা চাই না তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করুক। 

তৃতীয়ত, আমরা চাই না তারা সংখ্যালঘুদের (খ্রিস্টান, আলাবি, ইয়াজিদি, তুর্কমেন এবং কুর্দি) সাথে অসমতার আচরণ করুক। এবং আমরা চাই তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করুক এবং এলাকার অখণ্ডতা, রাজনৈতিক একীকরণ এবং সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করুক। 

এগুলো হলো সর্বসম্মত মূলনীতি। আমি মনে করি, যখন সব পক্ষ (আগ্রহী পক্ষগুলো) এই মূলনীতিগুলোতে একমত হবে এবং এই প্রত্যাশাগুলো সিরিয়ার দামেস্কের সরকারকে জানাবে, তখন আমরা ভাল ফলাফল দেখতে পাবো।

আল জাজিরা: আপনি প্রথম যে মূলনীতি উল্লেখ করেছেন, সেটি নিয়ে হয়তো সবাই সম্মত হতে পারে—যাতে সিরিয়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির সমর্থনে ব্যবহৃত না হয়। কিন্তু আমি যে বিষয়টি আগে বলেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্র তো SDF এবং YPG কে সমর্থন করে। যাদেরকে আবার তুরস্ক বিবেচনা করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, এই দুটি দল PKK-এর সাথে সম্পর্কিত—যাদেরকে তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে। এই পরিস্থিতিতে কি আপনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র YPG কে সমর্থন করার মাধ্যমে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন করছে?

হাকান ফিদান: হ্যাঁ। এবং আমরা এটা খোলাখুলিই বলেছি অনেকবার।

আল জাজিরা: যদি সেই নীতি পরিবর্তন না হয়, তবে কি সেটা আপনাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংঘাতের পথে নিয়ে যাবে? বিশেষ করে নতুন প্রশাসনের সাথে—যারা ক্ষমতায় আসছে?

হাকান ফিদান: একই সময়ে সন্ত্রাসবাদী হুমকি সমাধান করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংঘর্ষের পথ এড়ানো—এই ঝামেলাটাই আমরা বেশ কিছু বছর ধরে এড়ানোর চেষ্টা করছিলাম।  আমরা যখন আমাদের অপারেশন, গোয়েন্দা এবং সামরিক অভিযান পরিচালনা করছিলাম সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে—সেই একই সময়ে আমরা মার্কিনদের সাথেও সংঘর্ষে লিপ্ত ছিলাম। কূটনৈতিক এবং সামরিকভাবে এটা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমরা সফলভাবে এতদূর এসেছি। যদিও বড় সংঘর্ষের ঝুঁকি ছিল সবসময়ই। কারণ যেখানে তাদের উপস্থিতি রয়েছে, সেখানে আমাদের অস্তিত্বের হুমকি আছে। এখন আমরা উভয়েই এই সমস্যা ধরতে পেরেছি এবং তদনুসারে পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমি জানি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তিনি কয়েকবার এই নীতিগুলো থেকে বের হয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কেউই তার কথা শোনেনি।

আল জাজিরা: এর মানে কি তাহলে এই যে, সিরিয়া নিয়ে তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বার্থের সংঘাতের সম্ভাবনা এখনও খুবই প্রবল ?

হাকান ফিদান: আমি মনে করি, আমরা এগুলোর সমাপ্তিতে আছি। আমরা কাজটা সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।

আল জাজিরা: কুর্দিদের বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণ শুরু না করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কি তুরস্কের কাছে অনুরোধ করেছে? এমন কোনো অনুরোধ করা হয়েছে কি ?

হাকান ফিদান: আপনি জানেন, সবসময় বলা হয়—ISIS বিরোধী যে কোন কার্যক্রমকে বিঘ্নিত না করার জন্য। সুতরাং, তারা আমাদেরকে এটা বলতে পারে না যে, ‘আপনারা সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবেলা করবেন না।’ 

আল জাজিরা: তাহলে তাদের কাছে আপনাদের প্রতিক্রিয়া কী?

হাকান ফিদান: আমরা বলেছি—দেখুন, আমাদের তাহলে আরেকটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে। কারণ, আমরা আমাদের অপারেশন চালিয়ে যাব। এবং আন্তর্জাতিক একটি সম্প্রদায়কে আর যাইহোক—ISIS এর কারণে PKK ও YPG দ্বারা জিম্মি করা বা ব্ল্যাকমেইল করা উচিত নয়। এটাই আমাদের বার্তা। 

আল জাজিরা: আমরা দেখেছি, ইসরায়েল সিরিয়ায় একের পর এক আক্রমণ করছে। তারা এখন গোলান মালভূমির দখলকৃত অঞ্চলের বাইরের বাফার অঞ্চলে আরও ভূমি দখল করেছে এবং গোলান মালভূমিতে নতুন বসতি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। আপনি কি মনে করেন, ইসরায়েল কি শুধুমাত্র তাদের নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করছে? নাকি এই পরিস্থিতি ব্যবহার করে প্রকৃতপক্ষে তারা একটি ভূমি দখল করার চেষ্টা করছে?

হাকান ফিদান: ইসরায়েলের প্রথম কিছু পদক্ষেপ—বিশেষ করে প্রথম কয়েকদিনের অভিযান—নিরাপত্তা ব্যবস্থা রক্ষার কার্যক্রম হিসেবে বিবেচনা করা যেত। তবে নেতানিয়াহুর সরকার যখন ঘোষণা করে, গোলান মালভূমিতে বসবাসকারী জনগণের সংখ্যা দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তখন এটা একটা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এখন আমরা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে  উসকানির আভাস পাচ্ছি। আমি মনে করি, নেতানিয়াহু সরকার শুধু গণহত্যাকারী নয়, তারা আত্মঘাতীও। তারা শুধু আমাদের অঞ্চলের আরব ও মুসলিম জনগণের ভবিষ্যতকেই হুমকি দিচ্ছে না; বরং ইহুদি ও ইসরায়েলি জনগণের ভবিষ্যতকেও হুমকির মধ্যে ফেলছে। 

আল জাজিরা: সিরিয়ায় যা কিছু ঘটেছে, তাতে এটার ফল শেষমেশ কোথায় দাঁড়াচ্ছে? গাজার মানুষের উপর কি এর কোনো প্রভাব পড়বে? এটা কি তাদের আরও একা করে ফেলবে?

হাকান ফিদান: এমনটা আমি আশা করি না। কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসেবে আমরা কখনই তাদের একা ছেড়ে দেব না। তাদের সাহায্য করার জন্য যা কিছু করতে পারি, আমরা করব।

আল জাজিরা: তবে আমরা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে বলতে শুনেছি, ‘আসাদের পতন ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের একটি পরিকল্পনার ফল।’ তারা বলছেন যে এটি তাদের ‘প্রতিরোধ জোট’ ভেঙে দিয়েছে। এটি আপনি কীভাবে দেখেন?

হাকান ফিদান: আমরা সম্মানের সাথে এই আলোচনা হয়তো ১০০০ বার করেছি আমাদের ইরানের বন্ধুদের কাছে। কিন্তু তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। কারণ তাদের উপস্থিতি কেবল সিরিয়ায়। গাজার গণহত্যায় কিন্তু তারা নির্বিকার ভূমিকাই পালন করেছে।

আল জাজিরা: ধন্যবাদ মিস্টার হাকান ফিদান, আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলার জন্য।

হাকান ফিদান: আপনাকেও ধন্যবাদ।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা