মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজার যুদ্ধবিরতিতে হুথিরা হামলা বন্ধ করবে?

গাজার যুদ্ধবিরতিতে হুথিরা হামলা বন্ধ করবে?
গাজার যুদ্ধবিরতিতে হুথিরা হামলা বন্ধ করবে?। ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ হামলায় লেবাননের হিজবুল্লাহ কিছুটা দুর্বল হলেও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারে অটুট রয়েছে এখনও। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি আগামীকাল রবিবার থেকে কার্যকর হলেও হুথিরা জানিয়েছে, এই চুক্তি লঙ্ঘন হলে তারা তাদের হামলা অব্যাহত রাখবে।

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর নজিরবিহীন আক্রমণের পর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযানের শতাব্দীর বর্বটতম গণহত্যা শুরু করে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হুথিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে তারা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজ ও ইসরায়েলগামী বা ইসরায়েল-সম্পর্কিত জাহাজগুলোকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

হুথিদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলেও হুথিদের হামলা বন্ধ হবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ওটাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ইয়েমেন-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ টমাস জুনো বলেছেন, ‘হুথিরা এখন বেশি শক্তিশালী এবং প্রতিরোধ জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। হিজবুল্লাহর দুর্বলতার কারণে তাদের গুরুত্ব ও অনিবার্যতা বেড়েছে।’

জুনো বলেন, ‘এই পরিস্থিতি হুথিদের ইরানের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। গাজা যুদ্ধে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই হুথিদপর ইয়েমেনে নতুন করে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। কারণ, ইয়েমেনের জনগণের মধ্যে ফিলিস্তিন ইস্যু সব সময়ই বেশ শক্তিশালীভাবে জাগরুক থাকে।’

তবে জুনো মনে করেন, হুথিদের হামলা আপাতত বন্ধ থাকতে পারে, তবে তা স্থায়ী হবে না। তিনি বলেন, ‘তাদের আঞ্চলিক লক্ষ্য এবং আদর্শিক অবস্থান বিবেচনায়, ভবিষ্যতে তারা আবারও লোহিত সাগরে হামলার হুমকি দিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।’

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র একাধিক সামরিক অভিযান চালিয়েও হুথিদের থামাতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ব্রিটেনও এই হামলায় যুক্ত হয়েছে। তবে হুথি-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে এই আক্রমণ তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি।

হুথি নেতার হুঁশিয়ারি

গত বৃহস্পতিবার হুথি নেতা আবদুল মালেক আল-হুথি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘিত হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের হামলা চলতে থাকবে।
হুথি-নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল আল-মাসিরায় সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যদি ইসরায়েল চুক্তি থেকে সরে যায় বা আক্রমণ চালায়, তবে আমরা ফিলিস্তিনি জনগণকে পূর্বের মতই সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’

হুথি-সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ আল-বাশা বলেন, ‘হুথি নেতার বক্তব্যে চ্যালেঞ্জের সুর স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, তার দল সামরিক শক্তি বাড়ানো এবং নতুন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি চালিয়ে যাবে।’

ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন

ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতি সপ্তাহে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবারও হাজারো মানুষ সানার কেন্দ্রে জড়ো হয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন।

বিক্ষোভে হুথি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহইয়া সারিয়া জানান, হুথিরা চারটি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় উম আল-রশরাশ, ইয়াফা ও আসকেলান এলাকা এবং লোহিত সাগরে অবস্থান করা মার্কিন বিমানবাহীর রণতরী ইউএসএস হ্যারি ট্রুম্যান লক্ষ্যবস্তুতে ছিল।

তবে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেনি। সাধারণত হুথিদের হামলার পর ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করে। কিন্তু এবার এমনটি হয়নি।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক ইয়েমেনি নাগরিক জায়েদ আল-আস্তুত বলেন, ‘আমাদের উপস্থিতি নিজেই একটি বিজয়। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাগুলো ইসরায়েলকে গাজায় যুদ্ধবিরতির দিতে বাধ্য করেছে।’
হুথি কর্মী খালেদ আল-মাত্রি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি সমর্থন করি। তবে ইসরায়েল ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা