জামাআতে নুসরাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন (জেনিম)-এর আরোপিত অবরোধে মালির রাজধানী বামাকো এখন মারাত্মক সংকটে। প্রতিবেশী দেশগুলোর বন্দর থেকে আসা জ্বালানিবাহী ট্রাকগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালানোর ফলে রাজধানীতে দেখা দিয়েছে জ্বালানির তীব্র ঘাটতি। পুরো শহর কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
গবেষক বুকার সাঙ্গারের বিশ্লেষণের বরাত দিয়ে ফরাসি দৈনিক লিবারাসিয়ঁ জানিয়েছে, সম্প্রতি রাজধানীর আশপাশে জেনিমের তৎপরতা বেড়েছে। সরকার গ্রামাঞ্চলে জ্বালানি বিক্রি নিষিদ্ধ করে তাদের সরবরাহ লাইন কেটে দিতে চেয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় জেনিম রাজধানীর ওপর অবরোধ জোরদার করে। এতে মালির রাজধানী সরাসরি সংঘাতের ভৌগোলিক পরিসরের মধ্যে চলে এসেছে।
যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুলায়ে দিওপ একে ‘মনগড়া সংকট’ বলে মন্তব্য করলেও ফিলিং স্টেশনের সামনে লম্বা লাইন, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি আর স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া—সবই চোখে দেখা বাস্তবতা, যা বামাকোর ওপর বাড়তে থাকা চাপের স্পষ্ট প্রমাণ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বামাকোর পতন হতে পারে’ এমন আলোচনা ছড়িয়ে পড়লেও গবেষক বুকার সাঙ্গারে মনে করেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীটির রাজধানী দখলের বাস্তব ইচ্ছা নেই।
গবেষকের মতে, জেনিমের মূল লক্ষ্য রাজধানী দখল নয়; বরং অবরোধ করে সরকারকে চাপে ফেলা। এতে সেনাবাহিনীকে শহরগুলোতে অধিক মনোযোগ দিতে হবে, আর জেনিমের নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্রামীণ এলাকায় সামরিক চাপ কমে যাবে। দীর্ঘ সময় ধরে তারা এ চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, রাজধানীর ওপর বর্তমান অবরোধের আসল উদ্দেশ্য সামরিক সরকারের ভিত নড়বড়ে করে দেওয়া। অর্থনৈতিকভাবে বামাকোকে চাপে ফেলে সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হচ্ছে, যার মধ্যে সরাসরি আলোচনার পথও থাকতে পারে। নিজেদের বিকল্প শাসনব্যবস্থা হিসেবে তুলে ধরতে চাওয়া জেনিম মনে করছে, এভাবে ফলাফলহীন সামরিক অভিযান চালিয়ে গেলে সরকার ধীরে ধীরে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে করে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সহজ হবে।
এই অবরোধ বামাকো-মস্কো সামরিক অংশীদারিত্বের সীমাবদ্ধতাও স্পষ্ট করে তুলেছে এবং দেখিয়েছে যে, বর্তমান সামরিক শক্তি নিয়ে জেনিমের মোকাবিলা করতে সরকার এখন অক্ষম।
সাঙ্গারের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘রাজধানী পতন’-এর মতো শিরোনামে মিডিয়ার সৃষ্ট আতঙ্ক পরিস্থিতিকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করেছে। তবে তিনি স্বীকার করছেন, এই সংকট একই সঙ্গে মালির রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার নাজুকতা ও গভীর ত্রুটিকেও প্রকাশ করছে।
সূত্র: আল জাজিরা











