মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

বুথিডং কারাগারে রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মির অমানবিক নির্যাতন

নেই চিকিৎসা, নেই ওষুধ। অসুস্থদের হাতে একটি প্যারাসিটামল দিয়ে বলা হয়, ‘অপরাধীদের জন্য চিকিৎসা নেই।’ চিকিৎসার অভাবে বহু বন্দি মারা গেছেন
বুথিডং কারাগারে রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মির অমানবিক নির্যাতন
বুথিডং কারাগারে রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মির অমানবিক নির্যাতন। ছবি : সংগৃহীত

আরাকানের বুথিডং শহর দখলের পর রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, এএ-র হাতে আটক রোহিঙ্গা নাগরিকদের বুথিডং কারাগারে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এটি মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

বয়স-লিঙ্গ না দেখে কেবল সন্দেহের বশে যাকে-তাকে গ্রেপ্তার করছে এএ সন্ত্রাসীরা। যাদের তারা শত্রু বা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত মনে করছে, তাদের ওপরই চলছে নির্যাতনের স্টিমরোলার। আটক ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়া, আইনজীবী বা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তাদের রাখা হচ্ছে বুথিডং কারাগারে, যা এখন এক নির্মম নির্যাতনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে নিতে দেওয়া হয় শুধু একটি পোশাক। দিনে একবার খাবার দেওয়া হয়। অপুষ্টি, রোগ-ব্যাধি, দুর্বলতা, চর্মরোগ, ডায়রিয়া, বমি—সবই সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা। নেই চিকিৎসা, নেই ওষুধ। অসুস্থদের হাতে একটি প্যারাসিটামল দিয়ে বলা হয়, ‘অপরাধীদের জন্য চিকিৎসা নেই।’ চিকিৎসার অভাবে বহু বন্দি মারা গেছেন। রাতের আঁধারে তাদের মরদেহ গোপনে সরিয়ে ফেলা হয়।

প্রতি ১৫ দিনে একবার গোসলের অনুমতি দেওয়া হয়। গোসলের পর পরে থাকতে হয় সেই ভেজা কাপড়ই। বন্দিদের সারারাত জেগে থাকতে বাধ্য করা হয়, ঘুমালে বা কাজ করতে না পারলে মারধর করা হয়। এএ–র সন্ত্রাসীরা নিয়মিত কারাগারে ঢুকে বন্দিদের ওপর হামলা চালায়। লাঠি, লোহার রড ও ঘুষি দিয়ে মাথা ও মুখে আঘাত করা হয় তাঁদের।

পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, ফলে কেউ জানে না তাদের প্রিয়জন বেঁচে আছেন কি না। বন্দিদের জীবন এখন পশুর চেয়েও অধম। গরমে ও বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে।

স্থানীয় সূত্র মতে, বুথিডং কারাগারে বর্তমানে ১,৫০০-র বেশি রোহিঙ্গা বন্দি রয়েছে, যারা প্রতিদিন সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির নির্মমতা ও বর্বরতার শিকার হচ্ছেন।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই নির্যাতনকে ‘নাজি শিবিরের’ সঙ্গে তুলনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, এই গণনির্যাতনের জন্য আরাকান আর্মিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত।

আরো পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন