তুর্কি সাংবাদিক ও লেখক ত্বহা কিলিঞ্চ সম্প্রতি আট দিন ধরে পূর্ব তুর্কিস্তান ভ্রমণ করে তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ‘হারানো ভূমির সন্ধানে’ শিরোনামে একটি ভ্রমণবৃত্তান্ত প্রকাশ করেছেন। মুসলিম বিশ্ব নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করা এই লেখকের ভাষায়, এটি ছিল তাঁর জীবনের ‘সবচেয়ে কঠিন ও মানসিকভাবে শক্ত’ অভিযাত্রা।
গত জুনে করা এই সফরে তিনি প্রথমবারের মতো এমন এক অঞ্চলে প্রবেশের সুযোগ পান, যেটিকে বহু বছর ধরে চীনের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘নিষিদ্ধ এলাকা’ বলা হতো। কাশগর, ইয়র্কান্দ, উরুমচি, তুরফান, হোটান, আরতুশ ও গুলজাসহ বিভিন্ন শহরে ঘুরে তিনি খুঁজেছেন চারটি প্রশ্নের উত্তর,

১. মসজিদগুলো কি খোলা আছে? মানুষ কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারেন?
২. আজান কি শোনা যায়?
৩. রাস্তায় কি দেখা যায়, যেমন হিজাব পরা নারী বা কোনো দৃশ্যমান ধর্মীয় চিহ্ন?
৪. মানুষ দৈনন্দিন জীবনে কী ধরনের সীমাবদ্ধতার মুখে পড়ছে?
তাঁর পর্যবেক্ষণ বলছে, অধিকাংশ মসজিদই বন্ধ বা কেবল মিউজিয়াম হিসেবে চালু। কোথাও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের সুযোগ নেই। ‘আমাদের নামাজ পড়তে দেওয়া হয়নি। বহু মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে বা জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। কাশগরের ঐতিহাসিক ইদগাহ মসজিদেও নামাজ পড়া যায় না, সেটি শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা রাখা হয়েছে,’ বলেন ত্বহা।
অনেক মসজিদকে রেস্তোরাঁ, হোটেল বা বারে রূপান্তর করা হয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে ইসলামী পরিচয়ের সব চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে। কোথাও প্রকাশ্যে আজান শোনা যায় না। উরুমচির একটি মসজিদে তিনি লাউডস্পিকার ছাড়া নীরব আজানের মতো কিছু শুনেছিলেন মাত্র।
তাঁর ভাষায়, কোনো জায়গাতেই রাস্তায় হিজাব পরা নারী দেখা যায়নি, এমনকি পর্যটকবিহীন অলি-গলিতেও না। পুরুষদের মধ্যেও ধর্মীয় পোশাক পরা কেউ ছিলেন না।
ত্বহা লক্ষ্য করেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। কোথাও তালিকা ঝুলছে, কোন উইঘুর চালক কত লিটার জ্বালানি কিনতে পারবেন বা কত দূর গাড়ি চালাতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করা। দড়ি, তাবু, দূরবীন, টেলিস্কোপের মতো সাধারণ পণ্যও উইঘুরদের জন্য নিষিদ্ধ, কারণ সেগুলোকে ‘বিদ্রোহের প্রস্তুতি’র উপকরণ বলে ধরা হয়।
হোটানে তিনি দেখেছেন, এক মসজিদে বয়স্ক মুসলমানদের নাম ধরে ডাকা হচ্ছে, যাচাই-বাছাই শেষে তাঁদের দিয়ে চীনের প্রতি আনুগত্যের শপথ করানো হচ্ছে। তুরফানের কাছে তিনি দেখেছেন উঁচু দেয়াল, কাঁটাতার ও পাহারাদার টাওয়ারে ঘেরা একটি ‘রি-এডুকেশন ক্যাম্প’-এর নামে উইঘুরদের ওপর চালানো এক প্রকার গণ-মানসিক দমননীতির অংশ।
ত্বহা কিলিঞ্চের এই ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, পূর্ব তুর্কিস্তান অর্থাৎ শিনজিয়াংয়ের বাস্তবতা বাইরের প্রচারণার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁর বিবরণে উঠে এসেছে ধর্মীয় নিপীড়ন, মুসলিম সংস্কৃতি মুছে ফেলা, সর্বব্যাপী নজরদারি আর মানুষের জীবনে আরোপিত অসংখ্য সীমাবদ্ধতার এক ভয়াবহ চিত্র।
সূত্র: ডোম











