মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা, যা বলছে হামাস

reuters_68dad6a7-1759172263

গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার বিস্তারিত জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। এ উদ্যোগে সমর্থন দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু। এদিকে হামাস দায়িত্বশীলতার সাথে পরিকল্পনাটি বিবেচনা করবে জানিয়েছে।

পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধান খোঁজা হবে, যাতে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের পথ তৈরি হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা দখল করবে না এবং কাউকে জোর করে গাজা থেকে বেরও করা হবে না।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েল প্রকাশ্যে পরিকল্পনা গ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার পর ৭২ ঘণ্টার জন্য গাজায় সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে। এ সময় জীবিত বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং নিহতদের মৃতদেহ ফেরত দেওয়া হবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, হামাস এক ইসরায়েলি বন্দির মৃতদেহ ফেরত দেবে গাজার ১৫ জন মৃতদেহের বিনিময়ে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে। এই প্রক্রিয়া চলবে নিরস্ত্রীকরণের শর্ত ও মানদণ্ডের ভিত্তিতে, যা ইসরায়েলি বাহিনী, যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্যারান্টরদের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্ধারণ করা হবে।

পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, বন্দিমুক্তির ধাপ শেষ হলে ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিকে এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আটক গাজার আরও এক হাজার সাতশ বাসিন্দাকে মুক্তি দেবে।

চুক্তি গ্রহণের মুহূর্ত থেকেই গাজায় পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তবে হামাস দেরি করলে বা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে সহায়তা সীমিত থাকবে। কেবল পরিকল্পনায় ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ হিসেবে উল্লেখিত এলাকাগুলোতেই ত্রান প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এ পরিকল্পনায় গাজা ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক হামাসের সদস্যদের জন্য নিরাপদ করিডরের ব্যবস্থাও থাকবে।

গাজা পরিচালনায় আন্তর্জাতিক পরিষদের প্রস্তাব

গাজা যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, হামাস ইস্যুতে দায়িত্ব নেবে আরব ও মুসলিম দেশগুলো। হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুকে সঙ্গে নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা জানান।

ট্রাম্পের দাবি, পরিকল্পনায় হামাসকে অবিলম্বে নিরস্ত্র করা হবে এবং তাদের সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, হামাস যদি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তবে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে পদক্ষেপ নেবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানান, গাজা পরিচালনার জন্য একটি আন্তর্জাতিক তদারকি সংস্থা গঠনের প্রস্তাব রয়েছে, যার নাম হবে ‘শান্তি পরিষদ’। ট্রাম্প বলেন, তিনি নিজে টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে এই পরিষদের নেতৃত্ব দেবেন। নতুন এই পরিষদ গাজায় একটি সরকার গঠনের দায়িত্ব নেবে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণ থাকবে, তবে হামাস থাকবে না।

ট্রাম্প বলেন, ‘অনেক ফিলিস্তিনি শান্তিতে বসবাস করতে চান, আর আমি তাঁদের সমর্থন করি।’ তিনি দাবি করেন, গাজা ছেড়ে দিয়ে ইসরায়েল উদারতার পরিচয় দিয়েছে। নেতানিয়াহুকে তিনি আখ্যা দেন ‘যোদ্ধা’ হিসেবে এবং মন্তব্য করেন, ‘ইসরায়েল ভাগ্যবান এমন নেতা পেয়েছে, তবে জনগণ এখন শান্তি ও স্বাভাবিক সম্পর্ক চায়।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ফিলিস্তিনিরা হামাসকে নির্বাচিত করেছিল, ইসরায়েলও গাজা থেকে সরে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে শান্তি আসেনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করেন, ‘আব্রাহাম চুক্তি প্রমাণ করেছে, একসঙ্গে কাজ করলে সব দেশই লাভবান হয়।’ তিনি দাবি করেন, যেসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে, তারা সমৃদ্ধ হয়েছে; আর যেসব দেশ ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে, তারা পিছিয়ে পড়েছে।

গাজা ও হামাস

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, হোয়াইট হাউসে তাঁদের সবচেয়ে বড় বন্ধু হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ভাষায়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বকে ইতিবাচকভাবে বদলে দিয়েছে।

নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা পরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে সব বন্দি—জীবিত ও মৃত—ফেরত আসবে। একই সঙ্গে গাজা আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি হবে না। এই পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে এবং গাজা পরিচালনার দায়িত্ব এমন এক কর্তৃপক্ষের হাতে যাবে, যেখানে থাকবে না হামাস, থাকবে না ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও।

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা অঞ্চলটির জন্য নতুন সূচনা হবে। বিশেষ শর্ত পূরণের আগে গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা থাকবে না—ট্রাম্পের এই অবস্থানের প্রশংসা করেন তিনি।

নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে উসকানি বন্ধ করতে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার উদ্যোগ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। তাঁর দাবি, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করা।

পর্যালোচনা করবে হামাস

আল-জাজিরার এক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, কাতার ও মিসর হামাসের আলোচনাকারী দলের হাতে হোয়াইট হাউসের গাজা যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনা তুলে দিয়েছে। হামাস প্রতিনিধি দল মধ্যস্থতাকারীদের আশ্বস্ত করেছে, তারা প্রস্তাবটি দায়িত্বশীলতার সাথে পর্যালোচনা করবে।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার কাতারি ও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীরা হামাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা হাতে তুলে দেন।

বৈঠকে অংশ নেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আস সানি এবং মিসরের গোয়েন্দা প্রধান মাহমুদ রাশাদ। তাঁরা হামাসের আলোচকদের হাতে ২০ দফার পরিকল্পনা হস্তান্তর করেন। হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা পরিকল্পনাটি সদিচ্ছার সঙ্গে খতিয়ে দেখবে এবং পরে জবাব দেবে।

সূত্র: আল জাজিরা

আরো পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন