রাশিয়া ও বেলারুশের বইয়ের দোকানে বিক্রি শুরু হয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ারের লেখা উপন্যাসের রুশ অনুবাদ। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট জানায়, সীমিত সংস্করণে প্রকাশিত এ বই মঙ্গলবার থেকে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
উপন্যাসটির মূল আরবি নাম ছিল الشوك والقرنفل। তবে রুশ অনুবাদে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে— আমরা কীভাবে ইসরায়েলকে হারাতে পারি: মধ্যপ্রাচ্যের কাঁটা ও ফুল।
‘ফিলিস্তিনি চেগুয়েভারা’
বইটির প্রচ্ছদ বর্ণনায় ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে উপস্থাপন করা হয়েছে ‘ফিলিস্তিনি চেগুয়েভারা’ হিসেবে। সেখানে তাঁকে একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী আরব সামরিক নেতা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। উল্লেখ করা হয়, তুফানুল আকসা অভিযানের মূল পরিকল্পনাকারী এবং ২০২৩–২৪ সালে গাজার প্রতিরক্ষার প্রধান নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

বিবরণে আরও বলা হয়, ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক শক্তি ব্যবহার করলেও গাজা দখলে ব্যর্থ হয়। প্রায় ৮০ হাজার টন বোমা বর্ষণের পরও ক্ষুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলটি টিকে ছিল মূলত সিনওয়ারের নেতৃত্বেই।
রুশ সংবাদমাধ্যম নিউজরু জানায়, উপন্যাসটির রুশ অনুবাদ সীমিত সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে—মোট ১৫০ কপি। বইটি প্রকাশ করেছে মস্কোভিত্তিক রাজনৈতিক প্রকাশনা সংস্থা অ্যালগরিদম-এর শাখা রোদিনা প্রেস। এই প্রকাশনা সংস্থার লেখক আলেকজান্দার প্রোখানোভ ২০০৮ সালে লিখেছিলেন আলোচিত গ্রন্থ—’হামাস: বীরদের প্রশংসা।’
উল্লেখ্য, কারাগারেই সিনওয়ার এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন। ইসরায়েলি আদালতের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করতে গিয়ে তিনি টানা ২৩ বছর জেল খাটেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল দুই ইসরায়েলি সেনাকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা এবং চারজন ফিলিস্তিনিকে হত্যার, যাদের ‘ইসরায়েলের সহযোগী’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
ইতালিতে আলোচনার ঝড়
রুশ সংস্করণের আগেই বইটির ইতালীয় অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সেটিই ছিল পশ্চিমা কোনো দেশে সিনওয়ারের উপন্যাসের প্রথম সংস্করণ, যা প্রকাশের পরপরই তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। বইটির ভূমিকায় ইতালীয় ইতিহাসবিদ ও ইসলামী ইতিহাস গবেষক মার্কো দি ব্রানকো সিনওয়ারকে বর্ণনা করেছেন অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব হিসেবে, যার প্রভাব তুলনীয় চেগুয়েভারার সঙ্গে।
দি ব্রানকো লিখেছেন, এই উপন্যাসে নেই কোনো ঘৃণা বা প্রতিহিংসার ভাষা; বরং এতে ফুটে উঠেছে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ও শান্ত দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁর মতে, এ কারণেই বইটি পশ্চিমা পাঠকদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে—কারণ এখানে ইহুদিদের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্বেষ নেই, যা একে অনন্য করে তুলেছে।
সূত্র: আল জাজিরা





