মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ পড়ল ‘হাইয়াত তাহরির আশ-শাম’

যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ পড়ল ‘হাইয়াত তাহরির আশ-শাম’
যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ পড়ল ‘হাইয়াত তাহরির আশ-শাম’। ছবি : Ai

যুক্তরাষ্ট্র ‘হাইয়াত তাহরির আশ-শাম’ বা সাবেক ‘জাবহাতুন নুসরা’কে আর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করবে না। কয়েক বছর ধরে আলোচিত এই সংগঠনকে অবশেষে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ তালিকা থেকে সরিয়ে নিল মার্কিন প্রশাসন। ২৩ জুন এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও তা প্রকাশ করা হয়েছে আজ সোমবার। আগামী ৮ জুলাই থেকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেজিস্টারে প্রকাশের মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, অ্যাটর্নি জেনারেল ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ‘হাইয়াত তাহরির আশ-শাম’, ‘জাবহাতুন নুসরা’ এবং সংগঠনটির অন্যান্য উপনাম বা সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলো আর সন্ত্রাসী বিবেচিত হবে না। এত দিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ২১৯(এ)(৬)(এ) ধারার আওতায় এই সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। নতুন সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র প্রথম জাবহাতুন নুসরাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। একই সঙ্গে এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের (OFAC) SDN তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে সংগঠনটিকে আল-কায়েদার সহযোগী হিসেবেও ঘোষণা করে ওয়াশিংটন।

তৎকালীন এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘জাবহাতুন নুসরা মূলত ইরাকভিত্তিক আল-কায়েদার একটি শাখা। অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ এবং সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনায় তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।’

২০১১ সালের শেষদিকে সিরিয়ায় গণবিপ্লব শুরু হওয়ার পরপরই আবির্ভূত হয় জাবহাতুন নুসরা। সংগঠনটির নেতৃত্বে ছিলেন আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি, যিনি আহমাদ আশ-শারা নামেও পরিচিত। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি সিরিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী বিদ্রোহী সংগঠনে পরিণত হয়। তবে ইসলামপন্থী মতাদর্শ ও আল-কায়েদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে অনেক দেশ সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে এক ঘোষণায় জোলানি জানিয়ে দেন, জাবহাতুন নুসরা আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে এবং সংগঠনটির নতুন নাম হবে ‘জাবহাতু ফাতহিশ শাম’। উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী তকমা থেকে বেরিয়ে আসা।

এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এই সংগঠন আরও কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে একীভূত হয়ে নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করে—‘হাইয়াত তাহরির আশ-শাম’ (HTS) নামে। যদিও এই নাম ও কাঠামোগত রদবদল যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ‘কৌশলগত ও আনুষ্ঠানিক’ পদক্ষেপ বলেই মনে করে আসছিল। মার্কিন প্রশাসনের মতে, সংগঠনটির আদর্শ, লক্ষ্য ও কার্যক্রমে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। তাই HTS-এর নাম পরিবর্তনকেও তারা সন্ত্রাসবাদের প্রতিচ্ছবি বলেই গণ্য করে আসছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক ঘোষণায় সেই অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন আনল যুক্তরাষ্ট্র। HTS-কে আর সন্ত্রাসী তালিকায় রাখা হবে না।

বিশ্লেষকদের ধারণা, সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রভাব ও ভারসাম্য বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক কৌশলে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।

সর্বশেষ