গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর রক্তক্ষয়ী স্থলযুদ্ধ চলছেই। তবে এই যুদ্ধে প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে শুধু শত্রুপক্ষ নয়, নিজেদের অস্ত্রও। ইসরায়েলি সামরিক রেডিওর তথ্যমতে, গাজায় অভিযান শুরুর পর থেকে অন্তত ৭২ সেনা নিহত হয়েছেন ‘অপারেশনাল দুর্ঘটনায়’। যাদের মধ্যে ৩১ জন মারা গেছেন নিজেদের বাহিনীর গুলিতে—যাকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’।
গত বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৪০ সেনা নিহত হয়েছে। এর মধ্যে কেবল অভিযান চলাকালে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭২ জন, যা নিহত সেনাদের মোট সংখ্যার প্রায় ১৬ শতাংশ।
সামরিক রেডিওর তথ্যমতে, এই ‘অপারেশনাল দুর্ঘটনা’ বলতে বোঝানো হচ্ছে—
- নিজেদের বাহিনীর গুলিতে (ফ্রেন্ডলি ফায়ার) মৃত্যু: ৩১ জন
- অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহারে ভুল করে মৃত্যু: ২৩ জন
- সাঁজোয়া যানচাপায় মৃত্যু: ৭ জন
- বাহিনীর ভেতরে গোলাগুলিতে মৃত্যু: ৬ জন
এর বাইরে আরও উল্লেখযোগ্য কিছু দুর্ঘটনার কথাও সামনে এসেছে। চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে আরও ২ জন সেনা অপারেশনাল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে নিহত হয় মোট ৩২ জন সেনা, যার মধ্যে ৬ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে এ ধরনের দুর্ঘটনায়।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, অভিযান চলাকালে ইঞ্জিনিয়ারিং সরঞ্জাম ব্যবহারে দুর্ঘটনা এবং উঁচু স্থান থেকে পড়ে গিয়ে আরও পাঁচ সেনা নিহত হয়েছেন। তবে সর্বশেষ কোন দুর্ঘটনায় এই মৃত্যু ঘটেছে, তা বিস্তারিত জানায়নি সামরিক রেডিও।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত দেশটির ৮৮২ সেনা নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ছয় হাজারের বেশি।
এদিকে ইসরায়েলি দৈনিক ইদিয়োত আহরোনোত জানিয়েছে, গাজা এখনো প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে রয়ে গেছে। যদিও পাশাপাশি সিরিয়া, লেবানন, পশ্চিম তীর ও ইয়েমেনেও ইসরায়েল সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে।
তবে যুদ্ধের ভয়াবহতা সবচেয়ে নির্মম রূপে ধরা দিয়েছে গাজায়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৯২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। ধ্বংস হয়েছে লাখ লাখ ঘরবাড়ি, যার ফলে অন্তত ১৫ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
১৮ বছর ধরে গাজায় অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। সেই অবরোধের মধ্যেই চলছে ভয়াবহ বোমাবর্ষণ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুদ্ধের ময়দানে শুধু শত্রুপক্ষ নয়, নিজেদের ভেতরের ভুলেও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রশিক্ষণ, অভ্যন্তরীণ সমন্বয় এবং কৌশলগত প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার। বিশেষ করে ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’-এর মতো ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলায় উদ্বেগ বাড়ছে সামরিক মহলেও।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি