মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ভারতকে পারমাণবিক জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের

কাশ্মীরি সেনা
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি সেনারা। ছবি: ইউরোপিয়ান প্রেসফটো এজেন্সি–সংরক্ষিত

কাশ্মীরের পাহালগামে রক্তক্ষয়ী হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি হুঁশিয়ারি দিয়ে আসিফ বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মুখোমুখি সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের সংঘাত গোটা বিশ্বে উদ্বেগ ছড়াবে।’

কাশ্মীরের হামলার পর ভারতের প্রতিক্রিয়া মোটেই অপ্রত্যাশিত ছিল না বলে মন্তব্য করেন তিনি। বরং তাঁর ভাষায়, ‘এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত, যার উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ানো।’

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অবস্থান পরিষ্কার করে আসিফ বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদের যেকোনো রূপেরই নিন্দা জানাই। দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানই সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।’

পাহালগামে হামলার পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেন আসিফ। তাঁর দাবি, ‘এই হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার যে অভিযোগ দিল্লি তুলছে, তার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।’

এছাড়া তিনি জানান, হামলার দায় স্বীকার করা ‘জামাআতুল মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া’, যা লস্কর-ই-তইয়্যেবার (আসকারে তইয়্যেবা) একটি অংশ—এই সংগঠনটি এখন আর পাকিস্তানে সক্রিয় নয়।

আকাশপথে ভারতের যেকোনো হামলার উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান—সাফ জানিয়ে দেন আসিফ। বলেন, ‘ভারত যদি কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়, ইসলামাবাদও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না।’

তবে আলোচনার পথও খোলা রাখতে চায় পাকিস্তান। আসিফ বলেন, ‘কাশ্মীরসহ সব দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানে আমরা সংলাপে বসতে প্রস্তুত।’

একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান, যাতে তারা এই সংকট সমাধানে বিচক্ষণ ও ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট করেন ভারতের যেকোনো উত্তেজক পদক্ষেপের পাল্টা জবাব দিতেও পাকিস্তান প্রস্তুত।

সংকটের সূচনা

মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের ভারতশাসিত কাশ্মীরের পাহালগাম অঞ্চলে পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় সশস্ত্র হামলাকারীরা। এতে ২৬ জন নিহত হন এবং আরও অনেকে আহত হন।

হামলার পর সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিল্লি ফিরে শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

ভারতের অভিযোগ, হামলাকারীরা পাকিস্তান থেকে এসেছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, নয়াদিল্লি ‘পরিকল্পিত মিথ্যাচার’ করছে।

কাশ্মীরে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তির কার্যক্রম স্থগিত করেছে। পাকিস্তানি কূটনীতিকদের এক সপ্তাহের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ইতিমধ্যে দেওয়া ভিসাগুলোর কার্যকারিতাও বাতিল করেছে ভারত।

পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীসংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে ইসলামাবাদ জানিয়েছে, সিন্ধু চুক্তির বাইরে নদীর পানিতে ভারতের যেকোনো হস্তক্ষেপকে তারা ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে বিবেচনা করবে।

পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করার পাশাপাশি আকাশপথও বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি ১৯৭১ সালের শিমলা চুক্তি স্থগিতের ইঙ্গিতও দিয়েছে ইসলামাবাদ। এই চুক্তির মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়েছিল ভারত–পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা।

সর্বশেষ