সুদানের দক্ষিণ কর্দোফান রাজ্যের রাজধানী কাদুগলিতে সুদান পিপলস লিবারেশন মুভমেন্টের (এসপিএলএম) অতর্কিত হামলায় অন্তত ৪৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ২৮ জন। নিহতদের মধ্যে কাদুগলি ঐতিহ্যবাহী মসজিদের ইমাম ও খতিব নাজার মোহাম্মদ তুমও রয়েছেন। সুদান সেনাবাহিনী হামলার পর পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং হামলাকারীদের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির মুখে ফেলে।
সোমবার সকালে এসপিএলএম-এর উত্তর শাখার নেতা আবদুল আজিজ আল-হিলুর নেতৃত্বাধীন বাহিনী কাদুগলিতে হামলা চালায়। এ সময় শহরজুড়ে ভারী গোলাবর্ষণ করা হয়, যা নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়।
দক্ষিণ কর্দোফানের গভর্নর মোহাম্মদ ইব্রাহিম আবদুল করিম এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এই বর্বরোচিত হামলা আমাদের সহ্যসীমার বাইরে। তবে সেনাবাহিনী সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, যার ফলে হামলাকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে।’
সুদান সেনাবাহিনীর ১৪তম পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার ফয়সাল মুখতার আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, ‘কাদুগলির পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
সংঘাতের বিস্তার ও মানবিক সংকট
এই সংঘাত শুধু দক্ষিণ কর্দোফানে সীমাবদ্ধ নেই। সেনাবাহিনী বর্তমানে মধ্যাঞ্চলীয় খার্তুম ও আল-জাজিরা প্রদেশেও নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে, যেখানে তারা ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও সংঘাত ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত যুদ্ধে ২০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন। তবে মার্কিন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি।
ইতোমধ্যে সুদানের ১৮টি প্রদেশের মধ্যে ১৩টিতেই এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। যুদ্ধের কারণে দেশজুড়ে খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারের মুখে পড়েছেন।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠন এই সহিংসতা বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার লড়াই ও সামরিক সংঘাতের জেরে সুদানের জনগণ এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি