মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভকারীদের বহিষ্কারের ঘোষণা ট্রাম্প প্রশাসনের

প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভকারীদের বহিষ্কারের ঘোষণা ট্রাম্প প্রশাসনের
প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভকারীদের বহিষ্কারের ঘোষণা ট্রাম্প প্রশাসনের। ছবি : টিআরটি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বুধবার এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেইসব শিক্ষার্থী ও বিদেশি নাগরিকদের বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হবে, যারা প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

নির্বাহী আদেশের তথ্য-সূত্রে বলা হয়েছে, মার্কিন বিচার বিভাগ ‘সন্ত্রাসী হুমকি, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসযজ্ঞ ও মার্কিন ইহুদিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা’ প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে এবং ফেডারেল সম্পদ ব্যবহার করবে। এতে আরও বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে গাজার ওপর ইসরায়েলের হামলার পর ক্যাম্পাস ও রাস্তায় ‘ইহুদি-বিরোধিতার বিস্তার’ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ট্রাম্প বলেন, ‘যেসব বিদেশি নাগরিক প্রো-জিহাদী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে, তাদের সতর্ক করে দিচ্ছি—২০২৫ সালে আমরা তাদের খুঁজে বের করব এবং বহিষ্কার করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ‘হামাসপন্থী’ শিক্ষার্থীদের ভিসা দ্রুত বাতিল করা হবে। এসব ক্যাম্পাস আগে কখনও এতটা চরমপন্থায় আক্রান্ত হয়নি।’

গাজার ওপর ইসরায়েলের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভ হয়েছে। নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ সময়ে ইহুদি, আরব ও মুসলিম বিরোধী ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে।

নতুন নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, সব সরকারি সংস্থা ও বিভাগের প্রধানদের ৬০ দিনের মধ্যে হোয়াইট হাউসকে জানাতে হবে, তারা কীভাবে ‘ইহুদি-বিরোধিতা দমন করতে বিদ্যমান আইন প্রয়োগ করতে পারে’ এবং ‘আইন লঙ্ঘনকারী বিদেশি নাগরিকদের বহিষ্কার করতে পারে’। তবে এই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের তথ্য-সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা হামাসপন্থী ধ্বংসযজ্ঞ ও ভীতি প্রদর্শনে লিপ্ত হয়েছে, ইহুদি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে বাধা দিয়েছে, সিনাগগে উপাসকদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং মার্কিন স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য নষ্ট করেছে।

তবে বিক্ষোভকারীরা হামাসকে সমর্থনের অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, তারা কেবল গাজায় ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের প্রতিবাদ করছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৪৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি শহিদ হয়েছেন।

ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হামাসপন্থী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করবেন। ক্ষমতায় ফিরে আসার পর প্রথম দিনেই তিনি এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যা নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোর মতে, ‘প্রধানত মুসলিম ও আরব দেশগুলোর নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের ভিত্তি তৈরি করছে’।

নতুন নীতির আওতায় ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান ও অভিবাসীদের বহিষ্কারের ক্ষমতা আরও বাড়ানো হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে মুসলিম অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (CAIR)। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘এই নির্বাহী আদেশ বাকস্বাধীনতা ও প্যালেস্টিনীয় মানবাধিকারের ওপর আঘাত। এটি ইহুদি-বিরোধিতা মোকাবিলার নামে বিভ্রান্তিকর, অতিরঞ্জিত এবং বাস্তবায়নযোগ্য নয়।’

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি মার্কিন সংবিধানে প্রদত্ত বাকস্বাধীনতার পরিপন্থী এবং রাজনৈতিক মতপ্রকাশের অধিকার দমনের শামিল।

তবে ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্যাম্পাসে ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রে বহিরাগত উগ্রবাদ প্রতিরোধ করা।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা