২০২৪ সাল ইরানের জন্য একটি ঘটনাবহুল বছর । বছরজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা, আঞ্চলিক উত্তেজনা, এবং রাজনৈতিক পালাবদলের মতো উল্লেখযোগ্য নানা ঘটনা ঘটেছে।

কারমানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ
ইরানের কারমান শহরে ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি দুইটি ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ৮৪ জন নাগরিক প্রাণ হারান। ২৮৪ জন আহত হন। দুইটি ব্যাগে রাখা বোমা দূরনিয়ন্ত্রিত ডিভাইসের মাধ্যমে বিস্ফোরিত হয়। প্রথম বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে জমায়েত হওয়া জনতার মাঝে দ্বিতীয় বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে। এই হামলা কাসেম সোলাইমানির হত্যার স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের সময় ঘটে। ইরানি সরকার একে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।

ইসরায়েলে ইরানের হামলা
সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলি হামলার প্রতিশোধ নিতে ১৫০ টিরও বেশি রকেট ও ড্রোন ব্যবহার করে ফিলিস্তিনের দখলকৃত এলাকায় হামলা চালায় ইরান।
এই অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘ওয়াদা-ই-সাদিক’। ইরানের এই হামলা পরিচালিত হয় ইরাকের প্রতিরোধ বাহিনী, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সহযোগিতায়। তিন দশকের মধ্যে এটি ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো আঞ্চলিক রাষ্ট্রের প্রথম প্রত্যক্ষ হামলা।

ইসফাহানে ইসরায়েলি হামলা
২০২৪ সালের ১৭ এপ্রিল ইরানের ইসফাহান শহরে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী হামলা চালায়। ইরানের গণমাধ্যম এই হামলাকে গুরুত্বহীন দাবি করে জানায়, বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেলেও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে হামলা প্রতিহত করেছে।

রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু
২০২৪ সালের ১৯ মে রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি আজারবাইজান সীমান্ত পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন। দুর্ঘটনায় তার সাথে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল লাহিয়ানসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা প্রাণ হারান। ২০ মে সকালে ইরানের সরকারি টেলিভিশন রাইসির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।

নতুন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান
রাষ্ট্রপতি রাইসির মৃত্যুর পর আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংস্কারপন্থী প্রার্থী মাসউদ পেজেশকিয়ান বিজয়ী হন। ২৮ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে তিনি সাঈদ জালিলির সঙ্গে দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছান। ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় রাউন্ডে ৪৯.৮ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির মধ্য দিয়ে বিজয় নিশ্চিত করেন মাসউদ পেজেশকিয়ান।

ইসমাইল হানিয়ার হত্যা
৩১ জুলাই তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ইসরায়েলি হামলায় শাহাদাতবরণ করেন। তিনি ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তেহরানে ছিলেন। হামলায় তার দেহরক্ষীও শহিদ হন।

‘ওয়াদা-ই-সাদিক ২’ অভিযান
১ অক্টোবর ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ওয়াদা-ই-সাদিক ২’ নামে একটি বড়সড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই অভিযানে ইরান ২৫০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহার করে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মাত্র ১৫ মিনিটে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করে আঘাত হানতে সক্ষম হয়।

ইসরায়েলের পাল্টা হামলা
২৬ অক্টোবর ইসরায়েল ১০০টির বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের সামরিক স্থাপনা এবং অস্ত্র কারখানায় হামলা চালায়।
হামলা পরিচালিত হয় তেহরান, খুজেস্তান এবং ইলাম প্রদেশে। ইরান জানায়, তারা এই হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে এবং প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
২০২৪ সালজুড়ে এই ঘটনাগুলো ইরানের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
সূত্র : আরাবি ২১