মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ইসরায়েলের ধারাবাহিক চুক্তি লঙ্ঘনে গাজা যুদ্ধ বিরতি কি তবে ভাঙনের মুখে?

ইসরায়েলের ধারাবাহিক চুক্তি লঙ্ঘনে গাজা যুদ্ধ বিরতি কি তবে ভাঙনের মুখে?
ইসরায়েলের ধারাবাহিক চুক্তি লঙ্ঘনে গাজা যুদ্ধ বিরতি কি তবে ভাঙনের মুখে?

দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গাজায় ইসরায়েলি হামলা বাড়তে থাকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও জোরালো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার আওতায় গাজার প্রতিরোধশক্তি ও ইসরায়েলের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছিল, সেটি টিকবে কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

চুক্তি সইয়ের পর থেকেই ইসরায়েল নিয়মিতভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে আসছে। আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলি ছোড়া, সীমান্তে অনুপ্রবেশ, বোমাবর্ষণ ও ঘরবাড়ি ধ্বংসসহ ৪০০-র বেশি লঙ্ঘন নজরে এসেছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪০ জনের বেশি মানুষ শহিদ এবং অন্তত ৮০০ জন আহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য প্রতিবারই নানা অজুহাত দাঁড় করায়। এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বারবার মধ্যস্থতাকারীদের কাছে আবেদন জানাতে বাধ্য হয়েছে— ইসরায়েলের এসব লঙ্ঘন দ্রুত থামাতে।

এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, দখলদারের বাড়তে থাকা লঙ্ঘন মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে বিব্রত অবস্থায় ফেলেছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দেওয়ার ইসরায়েলের চেষ্টা ঠেকানো এখন তাদের দায়িত্ব।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জত আর রিশকও ইসরায়েলি দাবি নাকচ করেছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফকে তারা কখনোই জানায়নি যে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ। তাঁর ভাষায়, ইসরায়েল ‘ইচ্ছাকৃতভাবে অজুহাত বানাচ্ছে, চুক্তি ভেঙে আবারও গণহত্যার যুদ্ধে ফিরতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিরতি প্রতিদিন এবং পদ্ধতিগতভাবে লঙ্ঘন করছে আসলে ইসরায়েলই।

এদিকে গত শনিবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় বলেছে, ‘একজন সশস্ত্র যোদ্ধাকে গাজায় ইসরায়েলি দখলকৃত এলাকায় হামলার জন্য পাঠিয়ে হামাস যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।’ তবে হামাস এই দাবি সম্পূর্ণভাবে নাকচ করেছে এবং ওই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের আন্তর্জাতিক সংঘাত বিশ্লেষক ড. ইব্রাহিম ফারিহাত বলেন, ইসরায়েল গাজায় নিজের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ টিকিয়ে রাখতে চাইছে এবং এটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করেই।

একই মত দিয়েছেন আল জাজিরা সেন্টার ফর স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. লিক্বাআ মাক্কি। তিনি অনুষ্ঠানে বলেন, গাজায় ইসরায়েল যা করছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন মোটেও অসন্তুষ্ট নয়; বরং তারা এতে খুশি।

ইসরায়েল এখনো জোর দিয়ে বলছে, গাজায় পরবর্তী কোনো প্রক্রিয়া শুরুর আগে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র করতে হবে। অথচ গাজা চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে একাধিক বিষয় একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহার, পুনর্গঠন কাজ শুরু এবং গাজা পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন।

ইসরায়েল ‘শূন্য অঞ্চল’ কাজে লাগাচ্ছে

দোহার উচ্চতর শিক্ষার গবেষণা ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক সংঘাত বিষয়ক অধ্যাপক জানিয়েছেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো প্রতিরোধ শক্তিকে ভেঙে দেওয়া এবং সম্পূর্ণভাবে শেষ করা। তারা এটিকে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দেখে। তিনি বলেন, ইসরায়েল যে টার্গেটে হামলা বা হত্যাকাণ্ড করছে, তার কোনো প্রমাণ প্রদর্শন করে না; শুধু অভিযোগ করছে।

গত মাসে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, গাজার চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, শীর্ষ পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তারা হামাসকে জানিয়েছেন, দ্রুত অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে, না হলে জোরপূর্বক করা হবে।

ইসরায়েলি বিষয়ক বিশ্লেষক ড. মাহমুদ ইয়াজবেক মনে করছেন, ইসরায়েল ‘শূন্য অঞ্চল’কে কাজে লাগাচ্ছে, অর্থাৎ চুক্তির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের মধ্যে থাকা সময়কে।

ইসরায়েলি বিষয়ক বিশ্লেষক ড. মাহমুদ ইয়াজবেক বলেন, মধ্যস্থতাকারীদের কাছে এত শক্তি নেই যে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে ইসরায়েলকে গাজার ওপর হামলা থেকে বিরত রাখতে পারে।

তিনি বলেন, মূল দায়িত্ব এখন মধ্যস্থতাকারীদের, যাদের জন্য সরাসরি ট্রাম্পের সাথে যোগাযোগের সুযোগ আছে। তাদের উচিত এটি ব্যবহার করে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ভূমিকা নিতে প্ররোচিত করা, যাতে গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামানো যায়।

ইয়াজবেক বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা যদি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি না করেন, তাহলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অঞ্চলজুড়ে যে নতুন অরাজকতা গড়ে তুলছেন, তিনি সেটাকেই আরও এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

আরো পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন