ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ইসমাইল রিজওয়ান জানিয়েছেন, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ইসরায়েল একের পর এক চুক্তি ভঙ্গ করে চলেছে, তাই সম্ভাব্য যে কোনো উত্তেজনা বা সংঘাতের পুরো দায় দখলদার বাহিনীরই নিতে হবে।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, হামাস আজ ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা হাদার গোল্ডিনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। তিনি আরও বলেন, বাকি চার বন্দির মরদেহ উদ্ধারে গোয়েন্দা তথ্য, বিশেষ যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত টিমের প্রয়োজন। হামাস এ ইস্যুটি দ্রুত নিষ্পত্তি করে চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যেতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি বলেন, ইসরায়েল দিন-রাত গাজা উপত্যকার পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ‘হলুদ অঞ্চল’ নামের যে এলাকাটিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার কথা ছিল, সেখানেও হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার বাহিনী।
রিজওয়ান জানান, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ২৪১ জন ফিলিস্তিনি শহিদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৬১৯ জন। যুদ্ধবিরতি বলবৎ থাকা সত্ত্বেও গাজার অবকাঠামোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে ইসরায়েলের আচরণের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, দখলদার বাহিনী চুক্তিতে নির্ধারিত মানবিক প্রোটোকল মানছে না। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় ঢোকার কথা থাকলেও বাস্তবে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০টি ট্রাক প্রবেশ করছে।
রিজওয়ান জানান, আশ্রয়হীন মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, তাঁবু, অস্থায়ী ঘর (ক্যারাভান) ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের সরঞ্জাম অত্যন্ত সীমিত পরিমাণে ঢুকছে, যেন ‘ফোঁটা ফোঁটা করে’ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ এখনও চলছে। হাসপাতালগুলোতে ওষুধের তীব্র সংকট, আর রাফা সীমান্ত এখনো বন্ধ থাকায় অন্তত ১৫ হাজার আহত ও অসুস্থ মানুষ চিকিৎসার জন্য উপত্যকার বাইরে যেতে পারছেন না।
রিজওয়ান রাফা সীমান্ত বন্ধকে ‘গভীর মানবিক অপরাধ’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানান, ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেন তারা সীমান্ত খুলে দেয় এবং মানবিক প্রোটোকল ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুরোপুরি মেনে চলে।
রাফাহ থেকে যোদ্ধা সরানোর প্রস্তাব হামাসের
‘হলুদ রেখা অঞ্চল’ নিয়ে তৈরি জটিলতা সমাধানে হামাস মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতা ইসমাইল রিজওয়ান। প্রস্তাবে ওই অঞ্চল, বিশেষ করে রাফাহ এলাকা থেকে প্রতিরোধযোদ্ধাদের সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, দখলদার ইসরায়েল যেন নতুন আগ্রাসনের অজুহাত না পায়, সেই উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হামাস পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এবং যেকোনো উত্তেজনা ঠেকাতে সচেষ্ট, যাতে দখলদার বাহিনী কোনো কিছুকে হামলার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।
হামাসের অন্য এক শীর্ষ নেতা জোর দিয়ে বলেছেন, দখলদার বাহিনী যদি তাদের অবস্থানে হামলা চালাতে বা যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে চায়, তাহলে প্রতিরোধযোদ্ধারা আত্মরক্ষা করবে। তিনি বলেন, যোদ্ধাদের ‘হলুদ অঞ্চল’ থেকে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনকভাবে বেরিয়ে আসা নিশ্চিত করতে হবে। এটা যেন কোনোভাবেই ইসরায়েলের ভেতরের নির্বাচনী প্রচারণার রাজনৈতিক দরকষাকষির অংশ না হয়।
ইসমাইল রিজওয়ান মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন দখলদার ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করে এবং দ্রুত দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশের ব্যবস্থা করে।
হামাস যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা ও চুক্তি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন করে কোনো সংঘাত বা উত্তেজনা দেখা দিলে তার পুরো দায় ইসরায়েলকেই নিতে হবে।
গত ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ার পর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলো ২০ জন ইসরায়েলি বন্দিকে জীবিত এবং আরও ২৫ জনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে বাকি মরদেহগুলো উদ্ধারে সময় লাগছে।
গাজার সরকারি তথ্য দপ্তরের হিসাবে, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক হামলায় এখনো প্রায় ৯ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনির মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের কারাগারে এখন ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নারী ও শিশুও আছে। মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব বন্দি নিয়মিত নির্যাতন, অনাহার ও চিকিৎসাহীনতার শিকার হচ্ছেন, যার ফলে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা











