মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

তালেবানের কূটনৈতিক প্রজ্ঞা যেভাবে পথ দেখাচ্ছে আফগানিস্তানকে

বিশ্বরাজনীতির অঙ্গনে অস্ত্র গর্জে ওঠে, কিন্তু ইতিহাস বদলায় সংলাপের টেবিলে। যে জাতি সংলাপের ভাষা হারায়, তারা স্বাধীনতার মর্ম হারায়; আর যে জাতি তা পুনরুদ্ধার করে, তারা নতুন করে লেখে নিজেদের ভবিষ্যৎ।
তালেবানের কূটনৈতিক প্রজ্ঞা যেভাবে পথ দেখাচ্ছে আফগানিস্তানকে
তালেবানের কূটনৈতিক প্রজ্ঞা যেভাবে পথ দেখাচ্ছে আফগানিস্তানকে। ছবি : হুররিয়াত রেডিও

দীর্ঘ সংঘাত আর নিষেধাজ্ঞার অধ্যায় পেরিয়ে আফগানিস্তান এখন সংলাপ, পারস্পরিক সম্মান ও বাস্তববাদী কূটনীতির নতুন দিগন্তে পা রাখছে। পরিবর্তিত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এটি কেবল আফগানিস্তানের নয়, গোটা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভূরাজনীতির জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

বিশ্বরাজনীতির অঙ্গনে অস্ত্র গর্জে ওঠে, কিন্তু ইতিহাস বদলায় সংলাপের টেবিলে। যে জাতি সংলাপের ভাষা হারায়, তারা স্বাধীনতার মর্ম হারায়; আর যে জাতি তা পুনরুদ্ধার করে, তারা নতুন করে লেখে নিজেদের ভবিষ্যৎ। দীর্ঘ চার দশকের যুদ্ধ, বিদেশি আগ্রাসন ও অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পর আফগানিস্তান আজ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনায় দাঁড়িয়ে আছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি এখন কথা বলছে যুক্তির ও কূটনীতির ভাষায়। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও কাতারের সাথে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের সম্পর্কোন্নয়ন সেই পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত দেয়। সন্দেহ আর শত্রুতার স্থানে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে বোঝাপড়া ও সংলাপ। 

ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের কূটনৈতিক পদক্ষেপ আজ এক নতুন সত্য প্রমাণ করছে— নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধ নয়, বরং বোঝাপড়াই এখন বাস্তবসম্মত পথ। নেতিবাচক প্রচারণা, আন্তর্জাতিক চাপ, এমনকি একঘরে করার নানামুখী প্রচেষ্টা— কিছুই থামাতে পারেনি কাবুলের নতুন কূটনীতিকে। বরং তাদের সংযত ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান এখন আঞ্চলিক রাজনীতিতে এক নতুন আস্থার বার্তা দিচ্ছে। এ সবকিছুর প্রেক্ষিতেই কাবুল আজ আঞ্চলিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সংলাপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে, যা শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ।

আফগানিস্তান এাখন যেভাবে পারস্পরিক সম্মান ও গঠনমূলক সম্পর্কের ভিত্তিতে নতুন কূটনৈতিক মানচিত্র আঁকছে, তা কেবল একটি রাষ্ট্রের উপস্থিতির বার্তা নয়, এটি একটি জাতির টিকে থাকার শপথও বটে। কূটনীতির এই উত্তরণই আফগানদের দিচ্ছে নতুন মর্যাদা, নতুন পরিচয়।

সংঘাত থেকে সংলাপে ফিরে আসা সহজ নয়। কিন্তু আফগানিস্তান সেই কঠিন পথ পেরিয়ে এখন প্রমাণ করছে, যুক্তিই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক তাপমাত্রা এখন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে; বিশ্ব যেন ধীরে ধীরে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান নামের নতুন বাস্তবতাকে মেনে নিতে শুরু করেছে।

কূটনীতিতে সে কখনােই বিজয়ী নয়, যে স্রেফ  মুখে মুখে বিবৃতি দেয়; বরং বিজয়ী সে, যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও স্থির থাকতে পারে। ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান আজ সেই দৃঢ়তার প্রতীক। তাদের কূটনীতি কারও অনুকরণ নয়, কারও বিরোধিতাও নয়— বরং এক স্বাধীন জাতির পরিণত আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ।

সময়ের সাথে পরিষ্কার হচ্ছে, ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান এখন আর উপেক্ষার নাম নয়, বরং এক বাস্তবতা। এই কূটনীতি জন্ম নিয়েছে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে ত্যাগ ও ধৈর্যের মিশ্রণে। এর ভেতরে আছে ইসলামি ঐতিহ্যের প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক সংযম আর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধের ভারসাম্য।

এই কূটনীতি কোনো প্রচারণার ফল নয়, এটি এক স্বাধীন জাতির আত্মচেতনা থেকে উদ্ভূত। যে জাতি জানে তার মর্যাদা কোথায়, তার অধিকার কতখানি।

এটাই নতুন ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের পরিচয়। যুক্তি, সংলাপ ও সার্বভৌম মর্যাদার সমন্বয়ে গঠিত এক নতুন কূটনৈতিক বাস্তবতা।