বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয় ব্যবস্থা: কী ভুল হয়েছে এবং কীভাবে সমাধান করা যায়’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘আরাকানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে।’
বিষয়টি দেশের রাষ্ট্রীয় অবস্থান, নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মত করেছেন অনেকেই। তাঁদের প্রশ্ন—আরাকানের ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে কীভাবে তিনি এভাবে মন্তব্য করলেন?
তাঁদের অভিযোগ, ড. খলিলুর রহমান আরাকানের পরিস্থিতি সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে এমন হালকা সুরে কথা বলেছেন।
কেননা—
- ২০২৫ সালের ২ মে বুথিডংয়ের তান শ্বে খান গ্রামে একদিনে ৬০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে আরাকান আর্মি (এএ)। এ নিয়ে জাতিসংঘ এখনো তদন্ত চালাচ্ছে।
- এএ প্রতিদিন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে, সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বসাচ্ছে, পাহাড়ি অশান্তি উসকে দিচ্ছে এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
- প্রতিবছর প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ইয়াবা পাচার করছে, যা বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করছে।
- রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে পারছে না মূলত এ সন্ত্রাসী ও মাদকচক্রের কারণে।
- শত শত মসজিদকে শুকরের খোয়ারে পরিণত করেছে তারা এবং নিয়মিত মুসলিম নারী–তরুণীদের অপহরণ করে ক্যাম্পে নির্যাতন চালাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বক্তব্যকে অনেকে আরাকান আর্মির প্রতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বৈধতা দেওয়ার সমান মনে করছেন।
বাংলাদেশ যখন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন, তখন ড. খলিলুর রহমানের মন্তব্য দেশের অবস্থানকে দুর্বল করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
এ বক্তব্য বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী, যা রোহিঙ্গা ইস্যু এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা দুটোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
অনেকেই মনে করছেন, দেশের মুসলিম জনতা ও সচেতন নাগরিকেরা ইতোমধ্যেই ড. খলিলুর রহমানের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।
একই সঙ্গে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস, সেনাপ্রধান, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান ও হেফাজতে ইসলামের আমির মুফতি মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীসহ জাতীয় নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—ড. খলিলুর রহমানকে দ্রুত পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং রোহিঙ্গা বিষয়ক সব দায়িত্ব থেকে দূরে রাখতে হবে।





